নয়াদিল্লি: উপাচার্য নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় রাজ্যের আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। 'আমরা এখানে সিলেকশন কমিটি নিয়োগ করছি, ইলেকশন কমিটি নয়। নিজেদের বিশ্বাস করতে না পারলে, সুপ্রিম কোর্টকে বিশ্বাস করুন'। রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে এমনটাই জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট । বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থই একমাত্র লক্ষ্য, বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কী আছে প্রস্তাবিত বিলে? কীভাবে রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ? উপাচার্য নিয়োগ মামলায় রাজ্যের কাছে এ দিন বিস্তারিত তথ্য চাইল সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতে ১৫ সেপ্টেম্বর সার্চ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য় সরকার, আচার্য ও ইউজিসি-৩ পক্ষকেই ৫জন করে নাম পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশেই সংশোধনী চেয়ে আবেদন রাজ্য সরকারের। রাজ্য-রাজভবন-ইউজিসির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ও উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রতিনিধি রাখার আবেদন । রাজ্য সরকারের সেই আবেদনই খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট । 


উল্লেখ্য়, রাজ্য় ও রাজ্য়পালের সংঘাতের আবহেই,গত ১৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি তৈরি করে দেবে খোদ সর্বোচ্চ আদালত। তার জন্য়, রাজ্য় সরকার, আচার্য ও UGC- তিন পক্ষকেই ১০ দিনের মধ্য়ে ৫ জন করে বিশিষ্ট ব্য়ক্তির নাম পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। 


সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশই বুধবার পরিবর্তনের আর্জি জানায় রাজ্য় সরকার। রাজ্য় সরকারের আইনজীবী বলেন, রাজ্য় সরকার, রাজভবন , UGC ছাড়াও মুখ্য়মন্ত্রী ও উচ্চশিক্ষা সংসদের প্রতিনিধিও রাখা হোক সার্চ কমিটিতে। 


তখন সুপ্রিম কোর্ট বলে, আমরা এখানে সিলেকশন কমিটি নিয়োগ করছি, ইলেকশন কমিটি নয়। আপনারা যদি নিজেরা পরষ্পরকে বিশ্বাস করতে না পারেন, তাহলে সুপ্রিম কোর্টকে বিশ্বাস করুন। আমরা নিরপেক্ষ কাউকে রাখতে পারি। এখানে বিশ্ববিদ্য়ালয়ের স্বার্থই একমাত্র লক্ষ্য়। 


এর পর, আচার্য সিভি আনন্দ বোসের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, সার্চ কমিটির প্রস্তাবিত কোনও সদস্য পদত্যাগ করলে, সেক্ষেত্রে কী হবে?তখন সুপ্রিম কোর্ট বলে, সেই কারণেই ৫ জন করে নাম চাওয়া হয়েছে। কোনও একজন যদি রাজি না-ও হন, সেক্ষেত্রে অন্য় শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট ব্য়ক্তি থাকবেন। পশ্চিমবঙ্গে বহু বিশিষ্ট ব্য়ক্তিত্ব এবং বিজ্ঞানী আছেন। 


সার্চ কমিটি গঠনের জন্য়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো, এদিন, ৫ জন করে বিশিষ্টজনের নামের তালিকা জমা দেয় রাজ্য সরকার, রাজভবন ও UGC. রাজ্য় সরকারের দেওয়া তালিকায় যে ৫ জনের নাম দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য সব্য়সাচী বসু রায়চৌধুরী, ISI-এর অধ্য়াপক অভিরূপ সরকার, বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়, সাহা ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের অবসরপ্রাপ্ত অধ্য়াপক অভিজিৎ চক্রবর্তী ও সংস্কৃত বিশ্ববিদ্য়ালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অনুরাধা মুখোপাধ্য়ায়। 


অন্য়দিকে, রাজভবনের দেওয়া তালিকায় আছেন, IIT খড়গপুরের ডিরেক্টর বীরেন্দ্রকুমার তিওয়ারি, ব্য়াঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্সের অধ্য়াপক উদয় মৈত্র, ভরতপুরের মহারাজা সুরজমল ব্রিজ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য রমেশ চন্দ্র , ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি দিল্লির অধ্য়াপক S E হাসনাইন এবং IIT খড়গপুরের অধ্য়াপক ইন্দ্রনীল মান্না। এ ছাড়া UGC-র তরফেও ৫ জন বিশিষ্ট ব্য়ক্তির তালিকা জমা দেওয়া হয়। 


এ দিন, রাজ্য সরকারের কাছে একটি তালিকা চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যেখানে, রাজ্য়ের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করতে হবে, সেখানে কোন বিষয়গুলি পড়ানো হয়, এ সব তথ্য় বিশদে জানাতে বলেছে সর্বোচ্চ আদালত। এ ছাড়াও, উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত বিল, যা কিনা, রাজ্য়পালের সম্মতির অপেক্ষায়, সে ব্য়াপারেও রাজ্য় সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।  এ সংক্রান্ত তথ্য় দেওয়ার জন্য় তেসরা অক্টোবর পর্যন্ত সময় চেয়েছে রাজ্য় সরকার।  মামলার পরবর্তী শুনানি ৬ই অক্টোবর।