কলকাতা: কসবায় কলেজের মধ্য়ে ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন এই কলেজেরই প্রাক্তন TMCP নেতা এবং তৃণমূলকর্মী। প্রশ্ন উঠছে, এক প্রাক্তন TMCP নেতার কলেজে এই দাপট কীকরে? অনেকে বলছেন, বছরের পর বছর কলেজগুলোতে ছাত্র ভোট না হওয়াই এর অন্য়তম কারণ।
কসবায় আইন কলেজের ভিতরেই ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ। যা ঘিরে উত্তাল রাজ্য়। এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন ওই কলেজেরই প্রাক্তনী, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন নেতা ও তৃণমূলকর্মী মনোজিৎ মিশ্র। যার সঙ্গে তৃণমূলের তাবড় নেতা-মন্ত্রীর একাধিক ছবি সামনে এসেছে। মূল অভিযুক্ত সম্পর্কে খোদ নির্যাতিতাই FIR-এ লিখেছেন, কলেজের TMCP ইউনিটের অঘোষিত প্রধান এবং অত্য়ন্ত প্রভাবশালী। সবাই তার কথা শোনে। TMCP ইউনিটে সে সবাইকে পদ দেয়। এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কলেজে একজন প্রাক্তনীর এই দাপট, এই প্রভাব কী করে? তৃণমূল যোগের কারণেই কি এত প্রভাবশালী? শিক্ষাবিদদের মতে, এটা একটা কলেজের ছবি নয়। কলকাতা এবং রাজ্য়ের বিভিন্ন কলেজে গেলে দেখা যাবে প্রাক্তনীদের দাপাদাপির একই ছবি। আর এর এক এবং একমাত্র কারণ বছরের পর বছর, ছাত্র সংসদের নির্বাচন না করানো। জুটার সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "ছাত্র সংসদ ভোট ৮ বছর ধরে হচ্ছে না। এটা হলেই ঝামেলা শুরু হয়ে যায়। প্রতি বছর বলা হয়, হবে হবে। আগে হলে এই সমস্য়া হত না। বহিরাগতদের দাপট।'' ২০১৭-র জানুয়ারিতে শেষবার রাজ্যের কলেজে ছাত্র ভোট হয়েছে। তারপর রাজ্যে দুটো পঞ্চায়েত নির্বাচন, দুটো লোকসভা নির্বাচন, একটা বিধানসভা নির্বাচন, একাধিক উপনির্বাচন, পুরসভার নির্বাচন হয়েছে। হয়নি শুধু ছাত্র ভোটটাই। যাদবপুরে ২০২০ সালে এবং প্রেসিডেন্সিতে ২০১৯ সালে শেষবার ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু, আর কোনও প্রতিষ্ঠানে ২০১৭ সালের পর ৮ বছর ধরে ছাত্র ভোট হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলেই কলেজে কলেজে তৃণমূলের বর্তমান থেকে প্রাক্তন ছাত্রনেতাদের এই অবাধ দাপট। মার্চ মাসে, এই সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম বলেছিলেন, একটা অবস্থান নিতে হবে। ছাত্র নির্বাচন না হওয়ায় পড়ুয়াদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু, তারপরও ছাত্র সংসদের নির্বাচন কবে হবে, তার কোনও দিশা আপাতত নেই। বছরের পর বছর ধরে ছাত্রভোট না করানো নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বিরোধীরা। বিজেপির রাজ্যসভার সদস্য শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "তৃণমূল কংগ্রেস নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। কলেজ সংসদগুলো তৃণমূলের দখলে। নির্বাচন করালে তৃণমূল তৃণমূলকে খুন করবে। সেই পরিস্থিতি এই সরকার দেখতে পারবে না। এখন সব দুষ্কৃতী মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। এরকম বিকৃত মনস্ক, সামাজিক ব্যাধি সম্পন্ন মানুষ তৃণমূলের নেতৃত্ব দিচ্ছে।''