কমল কৃষ্ণ দে, কৌশিক গাঁতাইত: সর্বভারতীয় পরীক্ষায় ফের জয়জয়কার বাংলার। ইউপিএসসি’র ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল সার্ভিস পরীক্ষায় প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দুজনেই বঙ্গতনয়। প্রথম হয়েছেন আসানসোলের সিঞ্চনস্নিগ্ধ অধিকারী। দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন আউশগ্রামের পাণ্ডুক গ্রামের বিল্টু মাজি। এই দুই কৃতী ছাত্রকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স হ্যান্ডলে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, 'ইউপিএসসি আইএসএসের মত মর্যাদাপূর্ণ পরীক্ষায় বাংলার দুই ছেলে প্রথম এবং দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। এতে আমি আনন্দিত। দুই সফল ছাত্র সিঞ্চন এবং বিল্টুকে অভিনন্দন জানাই। আমাদের পড়ুয়াদের সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য উৎসাহিত করার জন্যই এই ফলাফল এসেছে।' মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, 'আমাদের ছাত্ররা আইএএস এবং আইপিএস পরীক্ষায়ও দারুণ প্রতিভা দেখাচ্ছে। রাজ্য সরকারের সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সিভিল সার্ভিসেস স্টাডি সেন্টার ইতিমধ্যেই তরুণ এবং উচ্চাভিলাষী ছাত্রদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।'
আউশগ্রামের পাণ্ডুক গ্রামের বাসিন্দা, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী বিল্টু মাজির বাবা পেশায় কৃষক। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্ট্যাটিস্টিক্সে স্নাতক হয়েই পরিবারের আর্থিক কষ্ট দূর করতে অল্পবয়সেই উপার্জনের রাস্তায় পা দেন। পোস্ট অফিসে একটি কাজ করতে করতেই ডব্লিউবিসিএস ও ইউপিএসসি পরীক্ষা দিতে থাকেন বিল্টু। তৃতীয়বারে হাতের মুঠোয় আসে সাফল্য। বরাবরই পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন বিল্টু। স্কুলে বরাবরই প্রথম স্থানাধিকারী হতেন তিনি। ২০১৫ সালে গ্রামের স্কুল থেকেই ৯৫.২৯ শতাংশ নম্বর সহ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে শান্তিনিকেতন থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ ও রাশিবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক উত্তীর্ণ হন তিনি।
WBCS পরীক্ষায় বসলেও প্রথমবার অসফল হন। কিন্তু রাশিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার দরুণ UPSC ISS পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য তাঁর এক অদম্য জেদ চেপে বসে। ২০২১ সালে পরীক্ষায় বসলেও ইন্টারভিউতে তিনি অসফল হন। এরপর ২০২২ সালে পরীক্ষায় বসেন আবার, লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে পারেননি বিল্টু। তবে ২০২৪-এ তৃতীয়বারের জন্য পরীক্ষায় বসেন আর তাতেই আসে প্রতীক্ষিত সাফল্য। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ওয়েবসাইটে যে ফলাফল প্রকাশ হয় তাতে দেখা যায় আউশগ্রামের প্রত্যন্ত গ্রামের মেধাবী ছাত্র বিল্টু মাজি সর্বভারতীয় ইউপিএসসি আইএসএস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান দখল করেছেন।
২০২১ সালে ব্রাঞ্চ পোস্ট মাস্টার হিসেবে বীরভূমের একটি গ্রামের পোস্ট অফিসে যোগদান করেন তিনি। পোস্ট অফিসে কাজ করতে করতেই তিনি ইউপিএসসিতে, কোনো সেন্টারে কোচিং নেওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি তাঁর। তবে দিল্লির এক কোচিং সেন্টারে পরীক্ষার আগে অনলাইনে মক টেস্ট দিয়েছিলেন বিল্টু। তিনি জানিয়েছেন, 'আমি নিয়মিত ভাগবত গীতার অধ্যায়গুলি শুনতাম। গীতার কর্মযোগ ও স্বামী বিবেকানন্দের প্রাকটিক্যাল বেদন্ত আমার সাহস জুগিয়েছে আর তাতেই আসে সাফল্য।'
অন্যদিকে, এই UPSC ISS পরীক্ষায় সর্বভারতীয় স্তরে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করলেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোলের সিঞ্চন স্নিগ্ধ অধিকারী। তিনি দেশের মধ্যে প্রথম স্থানাধিকারী ।গুরুত্বপূর্ণ এই সরকারি চাকরির পরীক্ষায় নজরকাড়া সাফল্যে উচ্ছ্বসিত পরিবারের সদস্যরা। সিঞ্চন স্নিগ্ধ অধিকারী আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী। তাঁর বাড়ি আসানসোলের ইসমাইলে। রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দ্বাদশ উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতার আইএসআই থেকে স্ট্যাটিস্টিক্সে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হন তিনি। মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান সিঞ্চন। তাঁর বাবা প্রদীপ অধিকারী আসানসোল মাইন্স বোর্ড অব হেলথের কর্মী এবং মা সুজাতাদেবী গৃহবধূ। সাফল্যের পুরো কৃতিত্বটাই সিঞ্চন দিতে চান তাঁর বাবা-মাকে।
Education Loan Information:
Calculate Education Loan EMI