বিটন চক্রবর্তী ও অনির্বাণ বিশ্বাস: বাম আমলে নিয়োগে নিয়মভঙ্গের অভিযোগে এবার তালিকা-তরজা। আত্মীয়দের চাকরি বিতর্কে আরও একটি তালিকা প্রকাশ করে ফের সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীকে নিশানা করেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেছেন সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও (TMC vs CPM)। প্রকাশ্যে এসেছে সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty) পরিবার সূত্রে পাওয়া একটি তালিকা (Kolkata News)।


শনিবার সুজনকে নিশানা করে কুণাল বলেন, "মূল যে প্রশ্ন, এক পরিবারের এতজনকে সরকারি চাকরি। এই প্রশ্নের উত্তর এখনও পর্যন্ত সুজনের কাছ থেকে পাইনি।" এর উত্তরে সুজন বলেন, "রোজ সকালে উঠ একটি করে চিরকুট বার করছেন। যদি বেনিয়ম, বেআইনি কিছু থাকে, চিহ্নিত করুক। কোর্টে যাক। কোর্টে দেখা হবে।"


নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে যখন তপ্ত বাংলার রাজনীতি, সেই সময়ই পূর্বতন বাম আমলে চিরকুট মারফত চাকরি বিলির অভিযোগ সামনে এসেছে। সেই নিয়ে তৃণমূল এবং সিপিএম-এর মধ্যে তরজা তুঙ্গে। পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কুন্তল ঘোষদের গ্রেফতারিতে একদিকে যেমন আক্রমণে বিদ্ধ হচ্ছে তৃণমূল, তেমনই বাম আমলে নিয়োগে দুর্নীতি এবং স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে পাল্টা আক্রমণের কৌশল নিয়েছে শাসকদল।


আরও পড়ুন: Udayan Guha: উদয়নের বিরুদ্ধে মন্তব্য, ভাগ্নি উজ্জয়িনী রায়কে আইনি নোটিস মন্ত্রীর ছেলে


রেড রোডের ধর্নামঞ্চ থেকে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই নিয়ে সরব হন। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "সব চাকরি চিরকুটে হয়েছে। সব ফাইল খুঁজে বার করতে বলেছি। যাঁরা আন্দোলনে বসে রয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই চাকরি হয়েছে চিরকুটে।" এতে পাল্টা কটাক্ষ ছুড়ে দেন সুজন। তাঁর কথায়, "যাঁদের ডিগ্রি লিখে, সেই ডিগ্রি মুছে দিতে হয়, তাঁরা মিলে যদি একটি দল চালান, নেতৃত্ব দেন, তাঁদের কাছ থেকে কী আর আশা করবেন?"



বাম আমলে চাকরি দুর্নীতি খুঁজে বের করতে নেতা-মন্ত্রীদের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। এই প্রেক্ষাপটেই সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী মিলি চক্রবর্তীর কলেজে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। শুক্রবার আবার তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, তাঁর ট্যুইটার হ্যান্ডলে এক ডজনের বেশি নামের তালিকা প্রকাশ করে আত্মীয়দের চাকরি নিয়ে ফের নিশানা করেন সুজনকে। পাল্টা সুজনের পরিবার সূত্রে পাওয়া একটি তালিকাও সামনে এসেছ।


সুজন বলেন, "একজন রেলের অফিসার, সেন্ট্রাল গভর্মেন্ট, জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং, WBCS, ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, অলটাইম রেকর্ড মার্কস। ঠিক জানেও না এসব। নিকোলাস পিরামল, খড়গপুর আইআইটি ইত্যাদি ইত্যাদি। লেখাপড়া করে যে চাকরি, এইটা যারা বোঝে না। নিজেদের যোগ্যতা কী জানে না। আর মাইনে কীরকম ভাবে এক্সটর্ট করে জানে না, তারা তালিকা নিয়ে ঘুরছে! এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। মিলি এক প্রশ্ন করেছে বলে ব্রাত্য বসু পালিয়ে গিয়েছেন। সব দম এদের জানা আছে। সব ফালতু কাজ!"



এর পাল্টা কুণাল বলেন, "আমরা প্রয়াত শান্তিময় ভট্টাচার্যের পরিবারের কিছু এই আত্মীয় এই জায়গায় চাকরি করেন আমরা সেটা দিয়েছিলাম। সেটা দিয়ে বলেছিলাম সুজনদা এটা ঠিক না ভুল। সুজনদার তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। ওষুধ ঠিক জায়গায় পড়লে যা হয় জ্বালা করে। উনি আর একটা তালিকা দিয়েছেন এটা নয়, সুজনদাকে আমি প্রশ্ন করছি ফুটবল মাঠ নিয়ে। আর সুজন দা ক্রিকেট মাঠের উত্তর দিচ্ছেন। সুজনদা আর একটা তালিকা দিয়েছেন সেখানে সব ভাল ভাল চাকরির কথা বলেছেন। হতেই পারে মেধা সম্পন্ন লোক আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু রহস্যটা ওই জায়গায়। এক পরিবারের এতজন শিক্ষায় সেটা ঠিক ছিল না ভুল।" চাকরি চুরি বিতর্কে এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন কতদূর অবধি যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।