কলকাতা : গরুপাচারকাণ্ডে সিবিআইয়ের হাতে অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে  (Mamata Banerjee) নিশানা করলেন বামফ্রন্ট নেতা সুজন চক্রবর্তী। পাশাপাশি 'মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্য' গ্রেফতার হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবৃতিও দাবি করেছেন তিনি। অনেক দেরিতে হলেও সিবিআই বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে গ্রেফতার করে ঠিক কাজ করেছে বলেও মত সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর (Sujan Chakraborty)।


অনুব্রত মণ্ডলের (Anubrata Mandal) গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, 'অনেক দেরিতে হলেও যুক্তিযুক্ত কাজ। সবাই জানেন মাফিয়া রাজনীতি করে দাপট দেখিয়ে খুশিমতো চলেছেন অনুব্রত মণ্ডল। হাজার হাজর কোটি টাকার সম্পত্তি বানিয়েছে। অপরাধের শেষ সীমানায় যারা বাংলাকে নিয়ে গিয়েছে তাদের ক্ষেত্রে শাস্তির কোনও বিকল্প নেই। দশবার ডাকার পরও যখন জাননি তখন বাড়ি গিয়ে কার্যত ঘাড় ধরে তুলে নিয়ে গিয়েছে সিবিআই, এটা না বোঝার কোনও কারণ নেই।'


যার সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে সুজন চক্রবর্তীর আক্রমণ, 'যখন উনি চড়াম চড়াম ঢাক বাজানোর কথা বলতে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্রয় দিয়েছেন, পুলিশকে বোমা মারার কথা বললে মুখ্যমন্ত্রী সার্টিফিকেট দিয়েছেন। অনুব্রত মণ্ডল এমনই দাপুটে নেতা যে সব জেলার তৃণমূল জেলা সভাপতি বদল হয়েছে, শুধুমাত্র বীরভূম ছাড়া। উনি আসলে মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্য। তাই এই গ্রেফতারিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবৃতি দিন, সেই দাবি রাখছি।'


বামফ্রন্টের পাশাপাশি বিরোঝী বিজেপি-র একাধিক নেতাও নিশানা করেছেন অনুব্রত মণ্ডলকে। রাসরি অনুব্রত মণ্ডলকে আক্রমণ শানিয়ে দিলীপ ঘোষ লেখেন, 'ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর, গানের পালা সাঙ্গ মোর। অনুব্রত মণ্ডলের খেলা শেষ! ঠগ বাছতে গাঁ উজাড়। কাল ও আজ মিলিয়ে তিন গ্রেফতার। লাইনে অনেকেই অপেক্ষায়...'। যে পোস্টে জনৈক এক বিজেপি সমর্থকের মন্তব্য 'গ্রামে ঢাক বাজিয়ে নকুলদানা বিলি করতে আপনার অনুমতি চাইছি...' যে প্রশ্নের উত্তরে 'একদম' লিখেও সায় দেন দিলীপ ঘোষশুভেন্দু অধিকারী বলেছেন, 'অনুব্রত মণ্ডল মাফিয়া। যাদেরকে উনি মুড়ির টিনে ভরে গরু পাচারের টাকা পাঠিয়েছেন, আশা করি তাদের নামও সিবিআইকে জানাবেন।'



পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পর তৃণমূলের আরও এক হেভিওয়েট নেতা কেন্দ্রীয় এজেন্সির জালে। গরুপাচার মামলায় সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার অনুব্রত মণ্ডল। গতকাল হাজিরা এড়ানোর পর আজ সকালে আদালতের নির্দেশনামা ও মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে বোলপুরের নীচুপট্টিতে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বাড়িতে পৌঁছে যান সিবিআই অফিসাররা। অনুব্রতর বাড়ি ঘিরে ফেলে কেন্দ্রীয় বাহিনী। বাড়িতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন সিবিআই আধিকারিকরা। বাড়ির সকলের মোবাইল ফোন নিয়ে নেওয়া হয়। 


সিবিআই সূত্রে খবর, এর আগে গতকাল বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিত্সক চন্দ্রনাথ অধিকারীর সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারীরা। আজ ওই চিকিত্সকের বয়ান রেকর্ড করা হতে পারে। সিবিআই সূত্রে খবর, অনুব্রত প্রভাব খাটিয়ে চিকিত্সককে দিয়ে প্রেসক্রিপশন লেখানোর চেষ্টা করেছিলেন কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়। কার নির্দেশে ওই সরকারি চিকিত্সক বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতির বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাও জানতে চায় সিবিআই। খবর সূত্রের। 


গরুপাচার মামলায় ১০ বার অনুব্রতকে তলব করে সিবিআই। ৯ বার হাজিরা এড়াল তৃণমূল জেলা সভাপতি। অসুস্থতার কথা বলে গতকালও হাজিরা এড়ান অনুব্রত। গরুপাচার মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন অনুব্রতর দেহরক্ষী সায়গল হোসেন।


আরও পড়ুন- গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে সিবিআই, বাড়ি থেকে বেরিয়ে কী বললেন অনুব্রত