দিল্লি: অনুব্রত-সুকন্যার বয়ানে ‘ভিন্ন সুর’ । ‘বাবার কথায় চেকবুকে সই, বাবাই সব জানে’ । ইডি সূত্রে খবর জেরায় এমনটাই দাবি করেন কেষ্ট-কন্যা সুকন্যা। ‘মণীশ কোঠারির পরামর্শেই মেয়ের সঙ্গে ব্যবসা। চালকলের ব্যবসা ও জমি কেনাবেচার কমিশনই আয়ের উৎস’। জেরায় দাবি করেন অনুব্রত, ইডি সূত্রে খবর।

  


গরু পাচার মামলায় দিল্লির রাউস অ্য়াভিনিউ কোর্টে ২০৪ পাতার চার্জশিট পেশ করল ED। চার্জশিটে দাবি, ২০১৫-১৬ সাল থেকেই অনুব্রত মণ্ডলের পরিবারের আয় বাড়তে শুরু করেছিল। বাংলাদেশে গরু পাচার এবং তাতে সুরক্ষা দেওয়ার মতো অপরাধমূলক কাজের টাকা জমা পড়েছিল তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। অনেক বিধায়ক এবং তৃণমূল নেতা, অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের মোবাইল ফোন মারফৎ অনুব্রতর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। আসল লটারি বিজেতাদের থেকে নগদে ২ কোটি টাকার লটারি কিনেছিলেন অনুব্রত। সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা হলেও, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার উৎস সম্পর্কে বলতে পারছেন না অনুব্রত কন্য়া সুকন্যা। 


ইডির চার্জশিটে বাবা ও মেয়ের বয়ানে ভিন্ন সুর মিলেছে। মণীশ কোঠারির পরামর্শেই তিনি ও তাঁর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডল ব্যবসা চালাতেন। গরুপাচার মামলায় চার্জশিটে অনুব্রত মণ্ডলের বয়ান উল্লেখ করে দাবি করল ইডি। কেন্দ্রীয় এজেন্সি সূত্রে খবর, বাবার নির্দেশেই কাগজপত্রে সই করতেন সুকন্যা মণ্ডল। জেরায় দাবি করেছিলেন অনুব্রত কন্যা। ইডির দাবি, অনুব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর মেয়ে ১০-১২ বার লটারিতে টাকা জিতেছেন।


চার্জশিটে ইডি উল্লেখ করেছে, অনুব্রতর রোজগারের উৎস জানতে চাইলে জেরায় তাঁর দাবি, জমি কেনাবেচার কাজ করে সেখান থেকে কমিশন পেতেন। এছাড়াও তাঁর চালকলের ব্যবসা রয়েছে। জেরায় অনুব্রত জানিয়েছেন, তাঁর ২টি ফোনই প্রাক্তন দেহরক্ষী সায়গল হোসেনের কাছে থাকত। এমনকী তাঁর ফোন ব্যস্ত থাকলে সায়গলের ফোনেই কথা কথা বলতেন।  চার্জশিটে ইডি উল্লেখ করেছে, এএনএম অ্যাগ্রোকেম ফুড প্রোডাক্ট প্রাইভেট লিমিটেড ও নীড় ডেভলপার এই দুটি কোম্পানির মাধ্যমে কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে কিনা অনুব্রতকে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, এবিষয়ে মণীশ কোঠারি বলতে পারবেন। 


গরুপাচার মামলায় জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর পরিবারের ২৪ টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেনের তথ্য মিলেছে। চার্জশিটে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে উল্লেখ করল ইডি। কেন্দ্রীয় এজেন্সির দাবি, অ্যাকাউন্টগুলিতে সবমিলিয়ে ১২ কোটি ৮১লক্ষ টাকার বেশি জমা পড়েছে। যার মধ্যে ৬টি অ্যাকাউন্ট অনুব্রত মণ্ডলের নামে, ৭টি অ্যাকাউন্ট সুকন্যা মণ্ডলের নামে, একটি অনুব্রতর প্রয়াত স্ত্রী ছবি মণ্ডলের নামে রয়েছে। ছবি মণ্ডলের সঙ্গে অনুব্রতর একটি ও ছবি মণ্ডলের সঙ্গে সুকন্যার একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এছাড়াও ৮টি অ্যাকাউন্ট রাইস মিল সহ বিভিন্ন কোম্পানির নামে রয়েছে। ভোলে ব্যোম রাইস মিলের একটি অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১ কোটি ৬২লক্ষ টাকার বেশি ও ওই রাইস মিলের আরেকটি অ্যাকাউন্টে প্রায় ২কোটি ৮ লক্ষ টাকার বেশি জমা পড়েছে। কালী মাতা ট্রেডার্স ও মা দুর্গা ট্রেডার্সের অ্যাকাউন্টে যথাক্রমে প্রায় ১ কোটি ৮৯ লক্ষ ও ১ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা জমা পড়েছে। চার্জশিটে ইডির দাবি, সুকন্যার একটি অ্যাকাউন্টে প্রায় ৭১ লক্ষ ও অনুব্রতর একটি অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ২৩ লক্ষ টাকার বেশি জমা হয়েছে। বেশির ভাগ টাকা জমা করা হয়েছে পিওসি মেশিনের মাধ্যমে, উল্লেখ ইডির চার্জশিটে।