নয়া দিল্লি: স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় কড়া পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। পরীক্ষায় অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ না করার জন্য শীর্ষ আদালতের তোপের মুখে পড়ল কমিশন। তাদের ও রাজ্য সরকারকে কার্যত হুঁশিয়ারি দিয়ে বিচারপতি সঞ্জয় কুমারের মন্তব্য, রাজ্য প্রশাসন দাগিদের ফের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ঢোকানোর চেষ্টা করছে। এক জনও দাগি প্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে তার ফল ভুগতে হবে এসএসসি-কে।
এদিন, SSC-র আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার বলেন, যদি অভিযোগকারী আইনজীবী প্রমাণ করতে পারেন যে, আবার ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের নির্বাচিত করা হয়েছে, তাহলে কমিশনকে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হবে। SSC-র কাছে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের তালিকা রয়েছে। তারা যদি ওই প্রার্থীদের ছাড় দেয়, তাহলে তার ফল ভুগতে হবে।
বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের জন্য কেন হাইকোর্টে গেছে SSC? কোনও যুক্তিই এর জন্য যথেষ্ট নয়, যদি না কিছু মন্ত্রী চান যে, ওই প্রার্থীরা থাকুন। নির্বাচন প্রক্রিয়া কলঙ্কিত হয়েছিল, কারণ কিছু মন্ত্রী চেয়েছিলেন তাঁদের প্রার্থীরা থাকুক।
বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ত্রুটিপূর্ণ বাছাই প্রক্রিয়ার জন্য জন্য বোর্ড, SSC এবং রাজ্য সরকার দায়ী। তাদের জন্য যোগ্যরা চাকরি হারিয়েছেন। তাঁদের জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন। তারা বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে আর আদালতকে দোষারোপ করা হচ্ছে? এটা কি ঠিক?
সুপ্রিম কোর্ট হুঁশিয়ারি দেয়, SSC’র ওপর তারা নজর রাখছে। নির্দেশ নিয়ে কারচুপি করা হলেই হস্তক্ষেপ করা হবে।পরীক্ষা শেষ হলে সর্বোচ্চ আদালত যাচাই করবে। যদি অভিযোগকারী দেখাতে পারেন যে, একজনও ‘অযোগ্য’ প্রার্থীকে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়েছে, যদি তার তালিকা থাকে, তাহলে সেটি সুপ্রিম কোর্টে পেশ করতে হবে। তালিকায় কারচুপি করা হলে আদালত সেটা CBI’কে দেবে। যাতে তারা ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের খুঁজে বের করতে পারে।
এর পাশাপাশি, অন্য একটি মামলায় এদিন SSC’কে সতর্ক করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি সঞ্জয় কুমার SSC’র আইনজীবীর কাছে জানতে চান, আগের নির্দেশ অনুসারে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের তালিকা পাবলিক ডোমেনে রেখেছেন? বিচারপতি প্রশ্ন করেন, SSC কেন ‘অযোগ্যদের’ নাম গোপন করতে চাইছে? কমিশনের আইনজীবীকে বিচারপতি বলেন, আপনি কয়েক সেকেন্ড আগে বললেন যে, তালিকা প্রকাশ করেছেন? দুঃখপ্রকাশ করে ৭ দিনের মধ্যে তালিকা প্রকাশের কথা বলেন SSC’র আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ৭ দিনের মধ্যে ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের তালিকা SSC’র ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
বৃহস্পতিবারের সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি এবং কংগ্রেস। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'শীর্ষ আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। এখন দেখার এই আদেশ আদৌ মেনে চলে কি না। এর আগে হাইকোর্টের রায় মানা হয়নি। শিক্ষা ব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে।'
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নিয়ে আশায় বুক বাঁধছে 'যোগ্য' চাকরিপ্রার্থীরাও।