ময়ূখ ঠাকুর চক্রবর্তী, কলকাতা: বালিগঞ্জের কুইন্স পার্কে ১৫ হাজার বর্গফুটের বিলাসবহুল পেন্ট হাউস চিটফান্ডকাণ্ডে (Chit Fund Case) ধৃত সুরানা গ্রুপ ফান্ডের (Surana Group Fund) কর্ণধার শান্তিলাল সুরানার (Shantilal Surana)। পুলিশি তদন্তে সামনে এসেছে প্রতারকের মোডাস অপারেন্ডি। সূত্রের খবর, শান্তিলালের টার্গেট ছিলেন বিত্তশালীরা। টোপ দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে জমি কিনতেন শান্তিলাল। এরপর সেই জমি বন্ধক দিয়ে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতেন। ফলে বিত্তশালী আমানতকারী ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানও শান্তিলালের প্রতারণার শিকার। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে এই তথ্য।
প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগ
মোটা লাভের টোপ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ শান্তিলালের বিরুদ্ধে। সূত্রের দাবি, সারদা, রোজভ্যালি যখন সক্রিয়, সেই সময় থেকে কার্যত নিঃশব্দে প্রতারণার জাল বিছিয়ে ছিল সুরানা গ্রুপ ফান্ড। নিম্ন-মধ্যবিত্তদের আস্থা কুড়িয়ে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে এই সংস্থা।
চিটফান্ডকাণ্ডে গত চার দিনে দিনে পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন ২ চিটফান্ড সংস্থার কিং পিন। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৪০০ কোটি টাকা তুলে পগারপার দিয়েছেন বলে। তো কোনও সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণার অঙ্ক প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার। অভিযোগ, মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো টাকা বাড়ানোর টোপ দিয়ে, অভিজাত আবাসন থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত এলাকায় তোলা হত কোটি কোটি টাকা।
সেভ দ্য বেয়ারফুটের প্রতারণার হদিশ পেয়েছে কলকাতা পুলিশের সিট। আর সুরানা গ্রুপের প্রতারণার পর্দাফাঁস করেছে রাজ্যের ডিরেক্টরেট অফ ইকনমিক অফেন্স। সুরানা গ্রুপ ফান্ডের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে বাজার থেকে ২ হাজার কোটি টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে। সূত্রের খবর, ২০০৭ সাল থেকে বাজার থেকে টাকা তুলত এই সংস্থা। অর্থাৎ, সারদা, রোজভ্যালির মতো চিটফান্ড সংস্থা যখন সক্রিয় ছিল তখনও, নিঃশব্দে কাজ করত সুরানা গ্রুপ। বিশেষ করে বিত্তবান প্রবীণদের নিশানা করত তারা। তাঁদের ফিক্সড ডিপোজিটে ১২-১৩ শতাংশ সুদের টোপ দেওয়া হত। সিংহভাগ অর্থই নেওয়া হত নগদে। তার পর বিপুল অঙ্কের নগদ টাকা বড়বাজারে হাওয়ালার মাধ্যমে পাচার হয়ে যেত।
সারদা-রোজভ্যালির পর আর এক চিটফান্ড কাণ্ড
মোটা টাকা ফেরানোর টোপে উচ্চবিত্ত প্রবীণদের ফাঁদে ফেলাই ছক ছিল সুরানা গ্রুপ ফান্ডের। আর সেভ দ্য বেয়ারফুট টার্গেট করেছিল নিম্নবিত্তদের। তাদের বিরুদ্ধে ৪০০ কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। সারদা বা রোজভ্যালির কায়দায় মধ্য কলকাতার একাধিক জায়গায়, কোথাও কনভেন্ট স্কুল, কোথাও স্পোকেন ইংলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কোথাও রেস্তোরাঁ, কোথাও গিফট শপ খুলে এলাকার বাসিন্দাদের আস্থা অর্জন করেন সংস্থার ডিরেক্টর লিজা মুখোপাধ্যায়।