পূর্ণেন্দু সিংহ, বাঁকুড়া : শীতের শুশুনিয়া বরাবরই ভ্রমণপ্রেমীদের আকর্ষণ। বর্ষশেষের ছুটিতে এবারও সেখানে পর্যটকের ঢল। প্রতিবারই নতুন কিছু উপহার দেওয়ার চেষ্টা করে বাঁকুড়ার এই পর্যটন কেন্দ্র। এবার শুশুনিয়ায় বর্ষবরণ হল এক্কেবারে অন্য মেজাজে। নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হল খোলা আকাশের নিচে ধামসা মাদলের বোল আর আদিবাসী নৃত্যের ছন্দে । পুরাতনকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাল শিউলিবনা গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়। প্রকৃতির মাঝে এমন বর্ষবরণ দেখতে শুশুনিয়ায় ভিড় জমিয়েছিলেন দূর দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা। শিউলিবনার রাস্তায় এখন থিকথিকে ভিড়।
বাঁকুড়ার ছাতনা ব্লকের শুশুনিয়া পাহাড় ঘেঁসা শিউলিবনা গ্রাম। ছবির মতো সাজানো এই আদিবাসী গ্রাম । সারা বছর এই গ্রাম একদম শান্ত। জীবনযাত্রা চমকহীন। চাকচিক্য নেই। তবে আছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির বদলে যাওয়া ক্যানভাস। আপাত ছিমছাম আড়ম্বরহীন এই গ্রাম জেগে ওঠে বর্ষবরণের সময়ে। শুরু হয় খেরওয়াল তুকৌ উৎসব।
তুকৌ বেশ প্রাচীন উৎসব । কথিত আছে আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগে শময়িতা মঠের প্রতিষ্ঠাতা সন্যাসী ধারতি বাবা শুশুনিয়ায় এসেছিলেন বছরের শেষ দিনে। ভালো লেগে যায় তাঁর এই শিউলিবনা গ্রামের মানুষের সহজ সরল জীবনযাপন। এরপর মূলত তাঁর উদ্যোগেই ওই গ্রামে শুরু হয় উন্নয়নের কাজ। দ্রুত বদলে যেতে থাকে গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান। তিন দশক আগে ধারতি বাবার আগমনের দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখার পাশাপাশি বর্ষ বিদায় ও নববর্ষকে স্বাগত জানাতে তখন থেকেই শুরু হয় খেরওয়াল তুকৌ উৎসব।
প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র গ্রামের মানুষই এই উৎসব শুরু করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটা। এখন শুধু বাঁকুড়া জেলা নয়, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দুই বর্ধমান, মালদা, মুর্শিদাবাদ সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আদিবাসী মানুষেরা ধামসা মাদল নিয়ে হাজির হন শুশুনিয়ার কোলে।
অসম, ওড়িশা, ঝাড়খন্ড থেকেও আসেন আদিবাসী শিল্পীরা। বছরের শেষ দিনে শিউলিবনা গ্রামের প্রান্তের মাঠে লাগড়া, পাতা, সহরাই, দাশাই নাচে বছরের শেষ অস্তমিত সূর্যকে বিদায় জানান আদিবাসীরা। রাতভর খোলা আকাশের নিচে চলে নাচ গান। সবথেকে রোমাঞ্চকর মুহূর্ত তৈরি হয়, যখন নতুন বছরের সূর্য ওঠে। নাচে-গানে বরণ করা হয় নতুন সকালকে, আস্তে আস্তে নতুন রবির কিরণ পাহাড়ের কোলে এসে পড়ে, তৈরি হয় অপরূপ এক মুহূর্ত।
আরও পড়ুন :