সমীরণ পাল, হিন্দোল দে ও উজ্জল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ফের বিজেপি-র হাতিয়ার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন। পারলে আটকে দেখান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মতুয়া তালুকে গিয়ে কার্যত এই মর্মেই চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বাংলায় সিএএ হবে না, পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ল তৃণমূল।
মতুয়া তালুকে গিয়ে মমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন শুভেন্দু
গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেখানে পড়শি দেশ থেকে আসা অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। বাংলাতেও সিএএ চালু বলে তার পরই মন্তব্য করেন শুভেন্দু। শনিবারও ফের সিএএ নিয়ে মুখ খুললেন তিনি।
সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে বলেন, "আপনারা জানেন, CAA বহু চর্চিত বিষয়। আমরা গর্বিত গুজরাতের একাধিক জেলাতে CAA কার্যকরের ব্যবস্থা হয়েছে। CAA কার্যকর হবে। কান খুলে ভাল করে শুনে নিন, মমতা ব্যানার্জি শুনে নিন, CAA কার্যকর হবে।" শুভেন্দুর এই মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া চাইলে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, "ভোটের আগে CAA নিয়ে রাজনীতি করছে ফের।"
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন থেকে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন, বার বার বিজেপি এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুখে বাংলায় সিএএ চালুর প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। মতুয়াদের মন জিততে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছুটে যান মতুয়াদের শ্রদ্ধেয় বড়মার কাছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের ওড়াকান্দিতে গুরুচাঁদের মূর্তির সামনেও মাথা নোয়ান মোদি।
এ বার সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে ফের সিএএ প্রসঙ্গ উঠে আসছে বিজেপি নেতাদের মুখে। সম্প্রতি গুরুচাঁদের মূর্তিতে ফুলে মারা পরাতে দেখা যায় শুভেন্দুকে। রাজ্যে সিএএ চালুই হয়ে গিয়েছে বলেও সম্প্রতি মন্তব্য করেন তিনি। মতুয়া ভোটকে সামনে রেখেই বিজেপি এবং দলের নেতারা এমন পন্থা নিচ্ছেন বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
আরও পড়ুন: Metro Rail: নতুন বছরের আগেই সুখবর, জোকা থেকে মেট্রে চালু ডিসেম্বরেই
কারণ শনিবারই উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে CAA নিয়ে সমাবেশের ডাক দেন, বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, যিনি আবার মতুয়া ঠাকুরবাড়ির সদস্যও। আর এই সভা থেকেই CAA কার্যকরী করা নিয়ে ফের জোরাল বার্তা দিলেন শুভেন্দু। একই সঙ্গে ফের উস্কে দিলেন NRC জল্পনাও।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই এর বিরোধিতা করে এসেছেন। কয়েকদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, CAA চালু করতে দেবেন না। কিন্তু মমতাকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেনশুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, "CAA কার্যকর হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। ...এটা আমার পার্টির মত নয়, ব্যক্তি শুভেন্দুর মত। NRC চাই। নাগরিকপঞ্জী চাই।"
উল্লেখ্য, বাংলায় প্রায় ২ কোটি ৮৭ লক্ষ মানুষ নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের, যার সিংহভাগই মতুয়া। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজ্যের ১০২টি বিধানসভা কেন্দ্রে মতুয়াদের প্রভাব আছে। এর মধ্যে ৩১টি সংরক্ষিত আসনে কার্যত নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা নেয় মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক। আর তাই মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ক নিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের এই দড়ি টানাটানি।
একসময় মতুয়ারা সিপিএমের দিকে ছিল। তার পর তৃণমূলের দিকে ঝোঁকেন। আর গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটে CAA চালু করার আশ্বাস দিয়ে, এই মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে বড়সড় থাবা বসিয়েছে বিজেপি। কিন্তু, প্রশ্ন হল সিএএ চালু কবে হবে? ২০১৯ সালে সংসদের উভয় কক্ষে পাস হয় সিএএ। কিন্তু, তার পর তিন বছর কেটে গেলেও এখনও তা কার্যকর হয়নি।
সিএএ চালুর পক্ষে সওয়াল শুভেন্দু, শান্তনুর
কেন্দ্রীয় জাহাজ প্রতিমন্ত্রী শান্তনুর বক্তব্য, "CAA চালু হবে, আপনারা দেখতেই পাবেন। সুপ্রিম কোর্টের ক্লিয়ারেন্স পেলে অটোমেটিক্যালি চালু হবে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে CAA’কে সমর্তন করে। রাজ্য আগাগড়াই ভুল বোঝাচ্ছে। বলেছি বার বার।" তবে শনিবার ওই সভায় শুভেন্দু, শান্তনুর পাশে দেখা যায়নি বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। ভোটবাক্সে কি এবারও প্রভাব ফেলবে সিএএ, কোন দিকে যাবে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক, উঠছে প্রশ্ন।