শুভেন্দু ভট্টাচার্য, বাচ্চু দাস, অরিত্রিক ভট্টাচার্য, কোচবিহার : কোচবিহারে গিয়ে ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করলেন শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতার কাছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। কলকাতার বৈঠক এড়াতেই কোচবিহারে গেছেন শুভেন্দু অধিকারী বলে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছেন কুণাল ঘোষ।


ভোট পরবর্তী অশান্তিতে বৃহস্পতিবার ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীদের নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও, পুলিশের বাধার মুখে ফিরে আসতে হয়েছে বিরোধী দলনেতাকে। যা নিয়ে জল গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত। আর শনিবার কোচবিহারে গিয়ে ঘরছাড়া দলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দেখা করলেন  শুভেন্দু অধিকারী।


উত্তরবঙ্গে ভাল ফল করলেও, লোকসভা ভোটে বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে কোচবিহার। হেরে গেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। আর ভোটের ফল বেরনোর পর থেকেই তৃণমূলের হুমকি ও হামলার জেরে দলের বহু কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া বলে অভিযোগ বিজেপির। কোচবিহারে বিজেপির সদর দফতরে সেরকম প্রায় ২০০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। এদিন তাঁদের সঙ্গেই সাক্ষাৎ করেন বিরোধী দলনেতা। ছিলেন নিশীথ প্রামাণিকও।


প্রাণকৃষ্ণ দেব নামে এক 'ঘরছাড়া' বিজেপি কর্মী বলেন, 'আমাদের যে পরিস্থিতি। আমরা বাড়িতে চলতে, ফিরতে পারছি না...আমরা কেমন করে বাঁচব ? আপনারা তো সবাই ঠিকঠাক জায়গাতে থাকেন, আমরা আজকে সাধারণ মানুষ...আপনি একটু গ্রামে গ্রামে সবার বাড়িতে বাড়িতে যান, আমি হাত জোড় করে অনুরোধ করছি। নাহলে আমরা বাড়িতে থাকতে পারব না স্য়ার।'


তখন শুভেন্দু বলেন, 'আমি নিজে ছুটে এসেছি আপনাদের এই সমস্য়ার সমাধান করার জন্য়। আমাদেরও সীমাবদ্ধ ক্ষমতা আছে।'


ঘরছাড়াদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর, জেলা নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করেন শুভেন্দু অধিকারী। 


এদিকে লোকসভা ভোটের পর কোচবিহারের পঞ্চায়েত চিত্রেও এসেছে বদল। উত্তরবঙ্গের এই জেলায় মোট ১২৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত আছে। ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোটে জিতে বিজেপির দখলে আসে ২৪টি। কিন্তু, লোকসভা ভোটের পর একে একে সাতটি পঞ্চায়েত তৃণমূল দখল করায়, বিজেপির দখলে রয়েছে ১৭টি। তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বিজেপি পরিচালিত অন্দারন ফুলবাড়ি ১, নাটাবাড়ি ১, মাথাভাঙার লতাপোতা পঞ্চায়েতে।


শুভেন্দু বলেন, 'যতক্ষণ না নিরাপত্তা দিতে পারছি, তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা, তাঁদের জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা এবং তাঁদের যা যা প্রয়োজন, যেগুলি আমাদের দ্বারা সম্ভব, আমরা সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি। যতজন আহত হয়েছেন, চিকিৎসার দায়িত্ব, দল ইতিমধ্যে নিয়েছে, ভবিষ্যতেও নেবে। পঞ্চায়েত অফিস যেগুলো খুলতে দিচ্ছে না, BDO-কে জেলাশাসককে চিঠি করা হচ্ছে। যদি সেই চিঠি অনুযায়ী জেলাশাসক হস্তক্ষেপ না করেন, তাহলে আমরা তাঁদেরকে নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হব।'


এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, 'জোর করে বিজেপির যিনি আগে ওখানে ছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিজেপি দখলদারি করেছিল। কোচবিহারে বিজেপি পরাজিত হওয়ার পর সেখানে স্বাধীনতার আনন্দ চলছে, মুক্তির আনন্দ চলছে। কলকাতায় দলের বৈঠক এড়ানে কোচবিহারে গেছেন শুভেন্দু। কারণ, ওই মিটিংয়ে ক্ষোভে ফুটছে আদি বিজেপি।'


সব মিলিয়ে ক্রমেই ঘোরাল হয়ে উঠেছে কোচবিহারের রাজনৈতিক পরিস্থিতি।