মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিম বর্ধমান: সরকারি অনুষ্ঠানে গিয়ে বন দফতরের আধিকারিককে প্রকাশ্যে ধমক দিলেন পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।তাঁর পরামর্শ না নিয়ে কেন বৃক্ষরোপণ? আপনি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বন আধিকারিককে হুঁশিয়ারির সুরে বলেন তৃণমূল বিধায়ক। ভিডিও পোস্ট করে শাসকদলকে নিশানা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। সাধারণ মানুষের জন্য লড়াই করেছি, ক্ষমা চেয়েও সাফাই দিয়েছেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক।

আরও পড়ুন, 'পশ্চিমবঙ্গে SIR শুরু হবে কবে ?' বৈঠকে জরুরি বার্তা মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের

পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক  নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, 'আপনি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি এখানকার বিধায়ক, আপনি আমার সঙ্গে পরামর্শ করবেন না? আপনি যা খুশি করবেন?' অখিল গিরির পর, এবার নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।প্রকাশ্যে বন আধিকারিককে ধমক দিয়ে, বিতর্কে জড়ালেন আরও একজন তৃণমূল বিধায়ক। স্বাধীনতা দিবসে দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের হেতেডোবা শিল্প তালুকের পাশে বাঁশগোড়া এলাকায় বনসৃজনের উদ্যোগ নেয় বন দফতর।  উপস্থিত ছিলেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক ও তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান কবি দত্ত ও দুর্গাপুরের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার অনুপম খাঁ-সহ আরও অনেকে। বন দফতরের আধিকারিককে সামনে পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তৃণমূল বিধায়ক। তাঁর পরামর্শ ছাড়া কেন বৃক্ষরোপণ? এই প্রশ্ন তুলে জেলাশাসকের সামনেই বন দফতরের আধিকারিককে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দেন পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক। ম়ঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারও। পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, শুনুন, আমাকে ভোটে হারাতে পারবেন না। আমাকে ভোটে হারাবার জন্য চক্রান্ত করছেন তো, আমাকে ভোটে হারাতে পারবেন না। আমাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। আমি ফোন করার পর আমাকে একটা চিঠি পাঠিয়েছে। বিধায়কের ক্ষোভ সামাল দিতে আলোচনায় বসার কথা জানান পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক।পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক  পুণ্যবলম এস বলেন, এই এলাকাটা...জায়গাটা পুরো ভরার আগে এখানে একটা DFO মহাশয় আছে, স্থানীয় প্রশাসন আছে, পঞ্চায়েত সমিতি আছে, মাননীয় বিধায়ক তো রয়েছেন, এঁরা একবার আলোচনা করে আমরা কীভাবে এই জায়গায় এগোব, সবাই সহমত হয়ে একটা সিদ্ধান্ত হবে। সরকারি আধিকারিককে তৃণমূল বিধায়কের ধমক দেওয়ার ভিডিও পোস্ট করে শাসকদলকে নিশানা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। পোস্টে তিনি লেখেন, তৃণমূলের নেতা, বিধায়ক, মন্ত্রীরা মনে করেন যে, সরকারি আধিকারিকদের কোনও মানসম্মান বোধ নেই। তাঁদেরকে যত্রতত্র সর্বসমক্ষে তিরস্কার করা, তাঁদের সাথে প্রকাশ্যে অপমানজনক আচরণ করা যেন তৃণমূলীদের জন্মগত অধিকার।...তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রীরা সরকারি কর্মচারীদের নিজেদের ব্যক্তিগত চাকর-বাকর ভাবেন, তাই দায়িত্ব পালন ঠিকঠাকভাবে করলেও, শুধুমাত্র আনুগত্যে অভাব দেখা দিলে এদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে অপমান করা যায়। জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ও (তৃণমূল বিধায়ক) নিজে প্রথমে বলল যে, 'ওই অঞ্চলে গাছ লাগাতে হবে। এখন দেখছে যে, ওই অঞ্চলে গাছ লাগাতে গিয়ে বেশ কিছু পরিবার তার বিরোধিতা করছে, ভোট কমে যেতে পারে, তাই DFO-কে গালাগালি আরম্ভ করল। সব থেকে যেটা দুর্ভাগ্যের, জেলাশাসকের সামনে এক নাটকবাজ বিধায়ক DFO-কে খারাপ কথা বলছে, গালাগালি করছে।' বিতর্কের মুখে পড়ে শেষমেশ ক্ষমা চান তৃণমূল বিধায়ক।পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন,ক্ষমাপ্রার্থী যদি আমার ব্যবহারে কেউ কষ্ট পায়। মানুষের জন্য আমাকে লড়াই করতেই হবে। ওখানে আদিবাসীদের যে জমি আছে, সেই জমির মাপজোক না করে,আদিবাসীদের সঙ্গে কথা না বলে তাদেরকে উদ্বাস্তু করার জন্য...যেভাবে ওঁরা (বন দফতর) এটাকে উপস্থাপিত করেছেন, আমার খুব কষ্ট হয়েছে। সেই জন্যই আমার এই রিপার্কেশন। বন দফতর জানিয়েছে, তাদের জমিতেই বনসৃজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।দুর্গাপুরের ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার অনুপম খাঁ বলেন, আমাদের কাছে ফরেস্ট ল্যান্ড দেখাচ্ছে রেকর্ডে...উনি কিছু প্রসঙ্গ তুলেছেন...ওখানে যে আদিবাসী বন কমিটিকে দিয়েই আমরা গাছ লাগাব...আমরা সবই আবার খতিয়ে দেখব...আমরা গাছ লাগাতে গেছি...অন্য কিছু তো করছি না। এর আগে গত বছরের ৩ অগাস্ট, বন দফতরের জায়গা দখলমুক্ত করতে গিয়ে অখিল গিরির রোষের মুখে পড়েন মহিলা বনাধিকারিক। বেআইনি দখল রুখতে আসা মহিলা রেঞ্জ অফিসারকে পেটানোর হুমকি পর্যন্ত দেন তৎকালীন কারামন্ত্রী এবং রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি। এবার দুর্গাপুরে সরকারি জমিতে গাছ লাগাতে আসায় আরেক বনাধিকারিককে হুঁশিয়ারি দিলেন পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক।