কলকাতা: নির্বাচনে ভরাডুবি নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে দায় ঠেলাঠেলি শুরু হয়েছে। সেই আবহে দলীয় বৈঠকে যোগ দিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। নির্বাচনী ভরাডুবি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে জানান, তিনি বিরোধী দলনেতা হলেও, দলের সংগঠনের দায়িত্বে নেই। সব ছেড়ে দিয়ে বিজেপি-তে এসেছেন তিনি। তৃণমূল ভোট দিতে দিচ্ছে না, সংবিধান, গণতন্ত্রের হত্যা করেছে বলেই এমন ফল বলে মন্তব্য করেন তিনি। (Suvendu Adhikari)


এদিন শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, "এই ফলাফল আপনারাও কল্পনা করতে পারেননি, আমরাও কল্পনা করতে পারিনি। প্রেসের বন্ধুদের সামনে রেখে এখানে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে না। চুলচেরা বিশ্লেষণের দরকার আছে, সেই জায়গা আলাদা। লক্ষ্য করবেন, বিরোধী দলনেতা আমি। দলের সংগঠনের দায়িত্বে নেই। আমি লোকসভা নির্বাচনের আগে বা পরেই বলুন, সংবাদমাধ্যমের সামনে এমন কথা বলি না, যাতে বুথের কর্মী, আমাদের ভোটাররা হতাশ হন। আমি এটাই চালিয়ে যাব।" (West Bengal BJP)


শুভেন্দু বলেন, "আমি জাতীয়তাবাদী পরিবার থেকে এসেছি। মুকুল রায়ের মতো সব কেড়ে নেওয়ার পর আমি বিজেপি-তে আসিনি। সব ফেলে দিয়ে বিজেপি-তে এসেছি। বিজেপি এবং সনাতন, ভারতীয় সংস্কৃতী এবং রাষ্ট্রবাদ, এখানেই আমার রিটায়ারমেন্ট হবে। এটুকু আমি কমিটমেন্ট করতে চাই। অনেক দূর পৌঁছে গিয়েছি আমরা। সংগঠনের ব্যাপারে যা বক্তব্য ছিল, দিল্লিতে গিয়ে সুনীলজিকে ওয়ান টু ওয়ান বলে এসেছি আমি। বাংলাকে কী করে বাঁচাতে হবে, অমিত শাহজি বাড়িতে ৪৫ মিনিট সময় দিয়েছিলেন, বলে এসেছি।"


শুভেন্দু আরও বলেন, "এই যে আমার হাতে কালি দেখছেন, আমি আজ বলছি, ২০২৬ সালে আমাকেও ভোট দিতে দেবে না। কারণ আমি হিন্দু। আমার বাড়ির সামনে সকাল থেকে ৫০ জন জিহাদি বসে থাকবে। দর্শকের আসন গ্রহণ করবে পুলিশ। এখনই যদি না জাগি আমরা, সায়েন্স সিটিতে বসে রয়েছি, ১০ কিলোমিটার দূরে ঘটকপুকুর, ভাঙড়। চারটি হিন্দু অঞ্চল আছে, আমি এবারে ড্রাই জোনে ঘুরেছিলাম, বাদুড়িয়া, হাড়োয়া, ভাঙড়, ক্যানিং পশ্চিম...যেখানে ওরা ১.৫০২ লক্ষ ভোটে জেতে। কী হয় দেখতে গিয়েছিলাম। চারটি হিন্দু অঞ্চল রয়েছে ভাঙড়ে। দু'টো অঞ্চলের কোনও হিন্দুকে ভোট দিতে দেয়নি সওকত মোল্লা।"


ভাঙড় ইসলামাবাদ হয়ে গিয়েছে বলেও দাবি করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, "বেঙ্গল কেমিক্যালসের কাছে মানিকতলায় যান। উপনির্বাচনে একটা হিন্দু, হিন্দি কথা বলে তো ছেড়েই দিন...বাড়ি থেকে বেরোতে দেয়নি। ১১টি হাউজিং, একজনকেও ভোট দিতে দেয়নি। স্লিপে ভোট হয়েছে। আমরা যদি না আটকাতে পারি, আমার তাড়াহুড়ো নেই। আমার পরিবার ইংরেজ আমল থেকে রয়েছে, জেল খেটেছে। আমাদের কিছুর প্রয়োজন নেই। বাংলায় গণতন্ত্র চাই। নইলে পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষ থাকবে না। আগে বিজেপি, বিরোধী হলে আটকাতো। লোকসভায়  ডায়মন্ড হারবার, শীতলকুচি, ফলতা, ক্যানিং, ধনেখালি, কেশপুর, জয়পুর, ইন্দাস, পাত্রসায়র, মিনাখাঁ, হাড়োয়া, বাদুড়িয়ায় হিন্দুদের ভোট দিতে দেয়নি। বলবেন কেন্দ্রীয় বাহিনী কী করছিল! কমিশনের গাইডলাইন পড়েছেন! বলা হয়েছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনী এন্ট্রি পয়েন্টে থাকবে। এপিক চেক করার পাওয়ার নেই তাদের হাতে।"


আজ ফের উপদ্রুত এলাকা আইন চালু করার কথা বলেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, "পশ্চিমবঙ্গ থেকে আওয়াজ তুলতে হবে, উপদ্রুত এলাকার আইন লাগু করে এখানে ভোট করতে হবে। আমরা ৩৫৬ চাই না, নবান্ন চাই না, ভোটে যেদিন জিতব, ঢুকব। কে বলেছে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা আসতে চাই আমরা? উপদ্রুত এলাকা আইন কার্যকর করে গুন্ডাদের ভোটের দিন বাড়িতে আটকে রাখতে চাই। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এপিক কার্ড দেখার অধিকার দেওয়া হোক। ভাবছেন ছেড়ে দেব! কাল রাজ্যপালের কাছে গিয়েছি ১০০ ভোটার নিয়ে যে হাতে কালি নেই, এপিক কার্ড আছে। কাল রাতে রাষ্ট্রপতিকে ইমেল করেছি, সময় দিন, বাংলায় সংবিধান শেষ করে দিয়েছে বলতে চাই। আমরা বাংলায় গণতন্ত্র চাই। গণতন্ত্রকে বাঁচান, সংবিধান বাঁচান। কমিশনকে বলেছি, পাঁচটা লোক নিয়ে যাব। ওয়েব কাস্টিংয়ের লাইভ অ্যাকসেস কেন থাকবে না প্রার্থীদের কাছে! এগুলো পাল্টাতে হবে।" শুভেন্দুর দাবি, বিজেপি-র সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতৃত্বের ব্যর্থতা, এসব পরে হবে। লড়াই চলছে, চলবে। বিজেপি জিতবেই।