ঋত্বিক প্রধান, হংসরাজ সিংহ, করুণাময় সিংহ, কলকাতা: টাকা নিয়েছে, ফেরত দিতে হবে, নাহলে চামড়া উঠে যাবে, আবাস যোজনা (Awas Yojana) নিয়ে এই ভাষাতেই তৃণমূলকে আক্রমণ করলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। আগে নারদকাণ্ডের (Narada Scam) টাকা ফেরত দিন। বিরোধী নেতাকে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন জয়প্রকাশ মজুমদার। অন্যদিকে গলায় গামছা দিয়ে টাকা আদায়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষ। যদিও গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল।


বিরোধী নেতাকে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন জয়প্রকাশ মজুমদার


রবিবার এগরার সভায় শুভেন্দুকে বলতে শোনা যায়, "চামড়া উঠে যাবে। টাকা নিয়েছে, ফেরত দিতে হবে অনেক টাকা নিয়েছে। ফেরত দিতে হবে।" আবার সিপিএম নেতা সুশান্ত বলেন, "গ্রামে যারা চুরি করে সম্পদের পাহাড় তৈরি করেছে, তাদের গলায় গামছা দিয়ে পঞ্চায়েতের পর টাকা আদায় করব।"


আবাস যোজনায় পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় গোটা রাজ্য। এক দিকে যখন, যোগ্য দাবিদারদের তালিকা তৈরিতে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে নবান্ন, সেই সময়ই তখন তৃণমূলেরই একাধিক নেতার বিরুদ্ধে উঠছে আবাস যোজনায় কারচুপির অভিযোগ। তা নিয়ে দলের অন্দরেও বাড়ছে ক্ষোভ।

এই প্রেক্ষাপটেই রাজ্যের শাসকদলকে নিশানা করে, ফের হুঁশিয়ারি দিলেন শুভেন্দু, সুশান্তরা। শুভেন্দু জানিয়েছেন, আবাস যোজনায় ঘর পাইয়ে দিতে যদি তৃণমূল নেতারা টাকা নিয়ে থাকেন, তাহলে ১৫ দিনের মধ্যে তাঁদের থেকে টাকা ফেরাবেন তিনি। তিনি বলেন, "এরা নিজেরা লিস্ট করেছে, টাকা নিয়েছে লোকের কাছ থেকে। ১৮ সালের লিস্ট। এখন আশাকর্মী ও আইসিডিএস-দের মার খাওয়ার জন্য পাঠিয়েছিল। ২৮ তারিখের মধ্যে লিস্ট বের করানোর কথা। ৩১ তারিখের মধ্যে টাকা দেওযার কথা। যদি টাকা দেয়, আমি জনগণকে বলে যাচ্ছি নজর রাখতে, টাকা যদি নেয়, কেন্দ্রের টাকা ফেরত করানোর দায়িত্ব আমাদের। এখানেও বলে গেলাম, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার ১৭ দফা গাইডলাইন ব্রেক করে একটা তোলামূলের নেতা যদি টাকা নেয়, ১৫ দিনের মধ্যে টাকা ফেরাব, নয়ত ক্রিমিনাল কেস করাব তাঁর বিরুদ্ধে।"


আরও পড়ুন: Projapoti Controversy: রাজনীতি নয়, সিনেমার জন্য দেব হয়েছি, মিঠুনের সঙ্গে আবারও কাজ করতে রাজি, ‘প্রজাপতি’ বিতর্কের মধ্যেই সোজাসাপটা দেব


দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের নিশানা করেন সিপিএম নেতা সুশান্তও। টাকার বিনিময়ে পদ পেতেই দুর্নীতি করেন তৃণমূল নেতারা, অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, "যে দলের নেতা, তাকে টাকা দিয়ে পদ নিতে হয়, আজ পঞ্চায়েতের সদস্য প্রার্থী হতে গেলে, তাকে টাকা দিয়ে প্রার্থী হতে হয়। পুরসভার প্রার্থী, এমএলএ, এমপি হতে হয় টাকা দিয়ে। তাই যে টাকা দিয়ে তারা পদ কেনে, সেই পদ কেনার পর, তারা কী করে তার চেয়ে অনেক বেশি টাকা মজুত করেত হবে, নাহলে পরের নির্বাচনে তারা আরও বেশি টাকা দিয়ে পদ কিনতে পারবে না, তাই এদের দুর্নীতি করতে হয়। তৃণমূলের ছোট-বড়-সেজ সব নেতাই চোর।"


তাতে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তৃণমূলের রাজ্য সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ বলেন, "আবাস যোজনার ঘটনা প্রশাসনিক স্তরে তদন্ত হচ্ছে এবং যেখানে দুর্নীতি সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শুভেন্দুর চিন্তা না করলেও হবে। কিন্তু শুভেন্দু যে নারদার টাকা নিলেন, সেটা কবে ফেরত দেবেন?" সুশান্তকে নিয়ে বলেন, "cpm কে এখন মাইক্রোস্কোপে খুঁজতে হয়, কে সুশান্ত ঘোষ, তাঁর মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া দেওয়ার কিছু নেই। আগে জিতে দেখান, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হোক, তারপর দেখা যাবে।"


দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের নিশানা করেন সিপিএম নেতা সুশান্তও


আবাস যোজনা নিয়ে একদিকে যখন তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএমের এই লড়াই চলছে, সেই সময়ই আবার কার্যত উলটপুরাণ দেখা গেল মালদায়। 
হরিশ্চন্দ্রপুরের কংগ্রেস পরিচালিত ভিঙ্গল গ্রাম পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন গ্রামবাসীরা। অভিযোগ, এই পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধান ও তাঁদের আত্মীয়দের নামও আবাস যোজনার তালিকায় রয়েছে। অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রায় এক ঘণ্টা পর পঞ্চায়েতের তালা খুলে দেন বিক্ষোভকারীরা।