কলকাতা: প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে রাজ্যের জেলাশাসকদের গরহাজিরা নিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ট্যুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘বৈঠকে রাজ্যের জেলাশাসকদের গরহাজিরা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখেছি। যদিও ২২ জানুয়ারির ওই বৈঠকে দেশের ১৯০টি জেলার জেলাশাসকরা অংশ নিয়েছেন। আর কতদিন রাজ্যের শাসক দল বঞ্চনার অভিযোগে কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলে মানুষকে ভুল বোঝাবে? প্রায় ৫০ বছর ধরে এই অবস্থা চলছে। এবার মনে হচ্ছে, আমাদের দিকে যে হাত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, আমরা নিজেরাই সেটা ধরতে চাইছি না। এটা চলতে পারে না।’ 


১৯৫৪ সালের আইএএস-ক্যাডার বিধিতে বদল আনতে চেয়ে মোদি সরকারের পাঠানো প্রস্তাব ঘিরে ইতিমধ্যেই সংঘাতে জড়িয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে দু-বার চিঠিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রেক্ষাপটেই শনিবার দেশের জেলাশাসকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও নবান্ন সূত্রে খবর, এদিন বাংলার কোনও জেলাশাসক এই বৈঠকে অংশ নেননি।


সরাসরি জেলাশাসকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ও সেখানে বাংলার ডিএম-দের অংশ না নেওয়া, সব মিলিয়ে মাথাচাড়া দিয়েছে বিতর্ক। বৈঠকে একদিকে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় ও যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর প্রশংসার সুর শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর গলায়। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, মুখে প্রশংসা করলেও, রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রের সমন্বয় ও যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর উল্টোদিকে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। 


লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর দাবি, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোতে আজকের কেন্দ্র সরকার আজকের বিজেপি পার্টি নির্লজ্জভাবে হস্তক্ষেপ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে দিতে চাইছে। আইএএস, আই এফ এস, এই সমস্ত চাকরিগুলো যারা করে অফিসাররা তাদের নিজেদের মতো করে নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচালনা করার জন্য তাদের জন্য নতুন করে রুল তৈরি করছে যাতে রাজ্যগুলোর আর নিজস্ব কোনও ক্ষমতা না থাকে।’


তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেছেন, ‘কেন্দ্র-রাজ্য পার্টনারশিপ ফমুর্লা। গত ৭৫ বছরে কোনও অসুবিধা হয়নি। আজ কি এমন সমন্বয়ের অভাব হল? কারণ ব্যুরোক্রেসিকে আয়ত্ত করতে চায়। জেলাশাসকদের সঙ্গে সরাসরি মিটিং করছেন কেন? কেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বাদ? খতিয়ান নিতে গেলে তো রাজ্যকে দরকার। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতির বিপক্ষে। কোথায় কাজ হচ্ছে আর হচ্ছে না, তা দেখে রাজ্য সরকার। টাইম টু টাইম রাজ্য জানায়। তাহলে প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন কেন?’


বিরোধীরা যখন এই অভিযোগ তুলছেন, তখন সুর চড়িয়েছে কেন্দ্রের শাসক দলও। রাজ্য বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘এই সরকার কোনও কাঠামোতে বিশ্বাস করে না। যা হওয়ার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ হয়েছে। উনি নিজেকে হয়তো প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। কিন্তু উনি নির্দেশ না দিলে কারও ক্ষমতা নেই মিটিংয়ে যোগদান করার।’


এবারই প্রথম নয়, সরাসরি জেলাশাসকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ডাকা নিয়ে আগেও সংঘাতে জড়িয়েছে দুই সরকার। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গত বছরের ২০ মে জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে পরে ওই দিনের বৈঠকে কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীকেও অংশ নিতে বলা হয়। যার মধ্যে ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রীও। যদিও সেই বৈঠকে তাঁকে বলতেই দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনার আট মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী-জেলাশাসকদের বৈঠক নিয়ে ফের সংঘাতে জড়াল কেন্দ্র-রাজ্য।