প্রবীর চক্রবর্তী, কলকাতা: দিল্লি থেকে কলকাতায় এসে একযোগে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে নিশানা যোগেন্দ্র যাদবের। শহরে একটি আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য় সরকার এবং রাজ্য়পাল সংঘাত নিয়ে মুখ খুললেন। জানিয়ে দিলেন, রাজ্যবাসীর উচ্চশিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যের নির্বাচিত সরকারেরই। (Yogendra Yadav)


এক সময় দিল্লির আম আদমি পার্টিতে ছিলেন যোগেন্দ্র। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়োগ ঘিরে সংঘাতের জেরে বেরিয়ে যান। পরে নিজের দল স্বরাজ ইন্ডিয়া গড়েন। শনিবার কলকাতায় 'হায়ার এডুকেশন ইন ইন্ডিয়া, ক্রাইসিস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস' শীর্ষক কনভেশনে যোগ দেন। সেখানেই কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে সরব হন। (Kolkata News)


এদিন যোগেন্দ্র বলেন, "রাজ্যে সরকার পরিচালনার কাজে রাজ্যপালের ব্যক্তিগত মতামত প্রয়োগ করা উচিত নয়। আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রয়েছে। এই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের উপরে নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উপরে নন।"


শুক্রবার রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি সংক্রান্ত বিল পাস হয় বিধানসভায়। এতদিন রাজ্যে উপাচার্য নিয়োগের সার্চ কমিটিতে তিন জন প্রতিনিধি থাকতেন। নতুন বিল অনুযায়ী, সার্চ কমিটিতে রাখা হয়েছে পাঁচ জনকে। রাজ্যপাল তথা আচার্যের প্রতিনিধি। তিনিই সার্চ কমিটির প্রধান। কমিটিতে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি, ইউজিসি চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি এবং উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি। তবে বিধানসভায় বিল পাস হলেও, রাজ্যপালের অনুমোদন প্রয়োজন। তবেই বিলটি আইনে পরিণত হবে। তবে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে দু'পক্ষের মধ্যে।


আরও পড়ুন: Adhir Choudhury : রাহুল গাঁধীকে দ্রুত সংসদে ফেরাতে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি অধীর চৌধুরীর, কটাক্ষ বিজেপির

সেই আবহেই কলকাতারপ আলোচনা সভায় সারকারিয়া কমিশনের কথা উল্লেখ করে যোগন্দ্র যাদব জানান, রাজ্যবাসীর উচ্চশিক্ষা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাজ্য সরকারেরই। তাঁর বক্তব্য, "তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয়, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল, সবচেয়ে শিক্ষিত, সবচেয়ে যক্তিবাদী, সবচেয়ে যুক্তিসঙ্গত ব্যক্তি, শুধুমাত্র শিক্ষার অগ্রগতিতে আগ্রহী। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া হয়, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী উচ্চশিক্ষার প্রচার করতে চান না, শিক্ষার জন্য কিছু করছেন না, শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে চাইছেন। সেক্ষেত্রেও আমি বলব, মুখ্যমন্ত্রী এবং নির্বাচিত সরকারেরই অধিকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার। কারণ, তারা মানুষের কাছে দায়বদ্ধ, রাজ্যপাল নন। "

সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং প্রাক্তন আইপিএস অফিসারকেও উপাচার্য পদে নিয়োগ করেছেন রাজ্য়পাল সিভি আনন্দ বোস। সেই নিয়ে তুঙ্গে রাজ্য় সরকার এবং রাজ্য়পালের সংঘাত। যোগেন্দ্রর দাবি, শুধু বাংলায় নয় গোটা ভারতে এই পরিস্থিতি চলছে। তিনি বলেন, "কেউ দিল্লিতে বসে ঠিক করে দিচ্ছেন, কোথায় কে রাজ্যপাল হবেন, কী করবেন? এটা গণতন্ত্র নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি চালানো নিয়ে রাজ্য সরকারকে সব সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হতে হবে। কোথাও ব্রিগেডিয়ারকে উপাচার্য করা হয়েছে, কোথাও পুলিশ আধিকারিক, সেনা আধিকারিককে উপাচার্য করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পদ পেতে রাজনৈতিক স্বীকৃতি একমাত্র যোগ্যতা!"


এ যাবৎ বার বার রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সরব হয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর কথায়, "সবাই উপাচার্য হিসেবে ঢুকে যাচ্ছেন, অবিজেপি রাজ্যে। এই প্রবণতা বাংলায় ছিল না। এখন এখানেও ঢুকে পড়ছেন।"


এখনও পর্যন্ত একাধিক ইস্যুতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়েছে রাজভবন। তৃণমূল বারবারই অভিযোগ তুলেছে, রাজভবন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বিজেপি-র দ্বারা। এবার সেই অভিযোগ শোনা গেল স্বরাজ ইন্ডিয়ার প্রধানের মুখেও।


Education Loan Information:

Calculate Education Loan EMI