কলকাতা: টাকার বিনিময়ে সংসদে আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করেছিলেন বলে অভিযোগ। সেই নিয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করেছে সংসদের নীতি কমিটি। এক এক করে এই ঘটনায় মহুয়ার পাশে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ, শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলেই মহুয়াকে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তাঁরা। তারই মধ্যে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজাকে (Shashi Panja) আদানিদের নিয়ে সুর নরম করতে শোনা গেল। তাজপুর বন্দরের প্রশ্নে শশী জানালেন, রাজনীতির জন্য উন্নয়ন আটকে যাবে না। (Tajpur Sea Port)
আদানিদের বিরুদ্ধে সংসদে প্রশ্ন তোলা মহুয়াকে নিয়ে যখন উথালপাথাল পরিস্থিতি, সেই সময়ই এমন মন্তব্য করলেন শশী। বললেন, "আমরা বিষয়টিকে ওভাবে দেখছি না। তাজপুর বন্দর অনেক বড় প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকারের জাহাজমন্ত্রক এবং অন্য বিভাগ থেকে এখনও কিছু ছাড়পত্র পাওয়া বাকি। গত বছরই LOI দেওয়া হয়েছে কর্ণ আদানিকে। আমরা চাই না, রাজনীতি উন্নয়নকে ঢেকে দিক। লড়াই করছি। বাংলাকে বেছে বেছে নিশানা করা হচ্ছে। আগে থেকেই একটা ধারণা তৈরি করে নেওয়া হয়েছে। মানুষের সমর্থন রয়েছে আমাদের সঙ্গে। তাকে পাল্টে দিতে পারে না কেউ।"
আমেরিকার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সংস্থা আদানিদের বিরুদ্ধে ভূরি ভূরি অভিযোগ সামনে আনলে, সেই নিয়ে দেশের রাজনীতি সরগরম হয়ে ওঠে। প্রশ্ন উঠে যায় তাজপুরে সমুদ্র বন্দর তৈরি নিয়েও, যার বরাত পেয়েছিল আদানিরা। যদিও বন্দর তৈরির কাজ থেমে যায়নি বলেই দাবি রাজ্য সরকারের। সেই আবহেই সম্প্রতি মহুয়ার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সংসদে আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ ওঠে।
বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে মহুয়ার বিরুদ্ধে টাকা এবং উপহারের বিনিময়ে আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ তোলেন। অভিযোগে বলা হয়, ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে মোটা টাকার বিনিময়ে সংসদে আদানিদের নিয়ে সরব হন মহুয়া। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আদানিদের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। অভিযোগ ওঠার পর শুরুতে মহুয়ার পক্ষই নিয়েছিলেন হীরানন্দানি। কোনও টাকা মহুয়াকে দেননি বলে জানান তিনি। কিন্তু পরে আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় মহুয়া টাকা নিয়েছিলেন বলে দাবি করেন। শুধু তাই নয়, সংসদের প্রশ্ন দমা দেওয়ার পোর্টালের আইডি-পাসওয়ার্ডও তাঁর সঙ্গে মহুয়া ভাগ করে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন।
প্রশ্নমালা সাজানোর জন্য সংসদের পোর্টালের আইডি-পাসওয়ার্ড দেওয়ার কথা মেনে নিলেও, টাকার নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন মহুয়া। পাশাপাশি জানান, সংসদের পোর্টালের আইডি-পাসওয়ার্ড নিয়ে লিখিত কোনও নিয়ম নেই। প্রত্যেক সাংসদই বাইরের অন্যকে দিয়ে এই কাজ করান। আইডি-পাসওয়ার্ড দিলেও, তাঁর মোবাইলে আসা OTP দিয়েই প্রশ্ন জমা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু মহুয়ার এই যুক্তি টেকেনি সংসদের নীতি কমিটির কাছে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি, তাঁর সাংসদপদ কেড়ে নেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা।
এই গোটা বিতর্কে কগ্রেস, সিপিএম-এর মতো বিরোধী শিবিরের একাধিক দল মহুয়ার পাশে দাঁড়ায় গোড়া থেকেই। সেই নিরিখে তৃণমূল নেতাদের সমর্থন আসে কিছুটা পরে। ফিরহাদ হাকিম, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর মহুয়ার সমর্থনে মুখ খোলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। মহুয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলে দাবি করেন তিনি। এতে আদানিদের নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। সেই আবহেই মুখ খুললেন শশী।