সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু হত্যা (Tapan Kandu Murder Case) ঘটনায় সিবিআই তদন্তের (CBI Investigation) নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে (Calcutta High Court) গেল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবারই প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে দ্রুত শুনানির আবেদন জানানোর সম্ভাবনা রয়েছে। গত ৪ এপ্রিল সিবিআই-কে এই মামলার তদন্তভার দেয় বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চ। ঝালদাকাণ্ডে (Jhalda Murder Case) বুধবারই FIR দায়ের করে তদন্তভার হাতে নিয়েছে সিবিআই।
তপনের সহযোগীর মৃত্যুতেও প্রশ্নে পুলিশের ভূমিকা
এ দিকে বুধবারই নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনের প্রধান সাক্ষী এবং প্রত্যক্ষদর্শী নিরঞ্জন বৈষ্ণবের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে তাঁর বাড়ি থেকে। তা নিয়েও নতুন করে কাঠগড়ায় পুলিশ। চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। কারণ নিরঞ্জন সুইসাইড নোটে পুলিশের বিরুদ্ধে হেনস্থার কথা লিখে গিয়েছেন। লাগাতার তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন নিজের শেষ চিঠিতে।
গত ১৩ মার্চ ঘুরতে বেরিয়ে খুন হন পুরুলিয়ার ঝালদার কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন। সেই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বন্ধু নিরঞ্জন। বুধবার রহস্যজনকভাবে বাড়ি থেকে তাঁরই ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। উদ্ধার হয় সুইসাইড নোটও।স্থানীয়দের দাবি, মঙ্গলবার রাতে বন্ধুর বাড়িতে ছিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনের অন্যতম প্রধাম সাক্ষী নিরঞ্জন। বুধবার ভোরে বাড়ি ফেরেন। তার পর ঘর থেকে ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
আত্মীয়দের দেওয়া সুইসাইড নোট অনুযায়ী, কংগ্রেস কাউন্সিলর খুনের সাক্ষী নিরঞ্জন লেখেন, ‘যে দিন তপনের (নিহত কংগ্রেস কাউন্সিলর) হত্যা হয়, সে দিন থেকে আমি মানসিক অবসাদে ভুগছি। যে দৃশ্য দেখেছি, তা কোনও ভাবেই মাথা থেকে বার করতে পাচ্ছি না। ফলে ঘুম হচ্ছে না রাতে। শুধু ওই ঘটনাই মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তার পর থেকে বার বার পুলিশের ডাক. আমি জীবনে থানার চৌকাঠ পার করিনি। এই সব আমি আর সহ্য করতে না পেরে এই পথ বেছে নিলাম। এতে কারও কোনও প্ররোচনা, চাপ বা হাত নেই। আমি স্বেচ্ছায় আত্মত্যাগ করলাম।’
বুধবার খবর পেয়ে নিরঞ্জনের মৃতদেহ উদ্ধারে গেলে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রা। এই রহস্যমৃত্যুর ঘটনাতেও CBI তদন্তের দাবি জানিয়েছে মৃতের আত্মীয়রা। মৃতের আত্মীয় অর্ণব দাঁ বলেন, “একটা শিক্ষিত মানুষ ফাঁসি কেন দিল, সেটা CBI তদন্ত দরকার।”
তপন খুনের সাক্ষী ছিলেন নিরঞ্জন
তপনের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দু আবার বলেন, “যখন আমার স্বামীর ঘটনা ঘটে, তখন উনিও সঙ্গে ছিলেন। হঠাৎ করে আত্মহত্যা করলেন কেন? নিশ্চই রহস্য আছে...হয়ত কেউ চাপ দিয়েছে। আমার স্বামীর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কিছু জানতেন হয়ত। কালকেও এসেছিলেন। হঠাৎ আত্মহত্যা করলেন কেন?”
তপনের ভাইপো মিঠিুন কান্দু বলেন, “খুনের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে নিরঞ্জন বৈষ্ণব এবং আরও একজনকে দিয়ে অভিযোগপত্র লেখায় ঝালদা থানার পুলিশ। জোর করে লেখানো হলেও নিরঞ্জনের অভিযোগপত্র পুলিশ জমা দেয়নি বলে অভিযোগ। তাই নিয়েই আতঙ্কে ভুগছিলেন নিরঞ্জন।”
মৃতের পরিবারের চাঞ্চল্যকর দাবি, মঙ্গলবার থেকেই নিরঞ্জনের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। সকালে মৃতদেহ উদ্ধারের পর থেকেই মোবাইল ফোনের খোঁজ মিলছে না।পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সুইসাইড নোটেই সব কিছু পরিষ্কার করে বলা আছে।তিনি যেহেতু এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, তাই স্বাভাবিকভাবে তার উপর চাপ পড়েছিল। উনি নিজেই সেটা লিখেছেন। আর পুলিশ নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত করছিল। উনি যেহেতু সাধারণ মানুষ, তাই এটাতে অভ্যস্ত ছিলেন না। উনি পুলিশকে দোষ দেননি, তা সুইসাইউ নোটেই লেখা রয়েছে। আর, FIR করার জন্য ওনাকে চাপ দেওয়া হচ্ছিল, এরকম অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। পুলিশ পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখছে।