প্রকাশ সিন্হা, সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: কুন্তল ঘোষের (Kuntal Ghosh) নিয়োগ দুর্নীতির (Recruitment Scam) পিছনে পাঁচশো কোটি টাকার খেলা। বিস্ফোরক দাবি করলেন ধৃত তাপস মণ্ডল (Tapas Mondal)। তাঁর আরও অভিযোগ, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) নাম ভাঙিয়েও নাকি টাকা তুলেছেন কুন্তল ঘোষ। পাগলের কথার উত্তর দেব না। পাল্টা বললেন কুন্তল।



প্রেক্ষাপট...
কখনও ১৯ কোটি ৪৪ লক্ষ টাকা!!! তো কখনও ১০০ কোটি!!! আর এবার ৫০০ কোটি!! নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে ধৃত তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুব নেতা কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে, এবার এই বিপুল পরিমাণ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন, ধৃত তাপস মণ্ডল। শুধু তাই নয়, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে যখন মাথার খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা, তখন কার্যত বোমা ফাটালেন মানিক ভট্টাচার্য ঘনিষ্ট তাপস। তাঁর দাবি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ভাঙিয়ে টাকা তুলেছেন কুন্তল। তাঁর দাবি, 'এর আগে তো প্রথম দিনই আমি বলেছি, ১০০ কোটি টাকার খেলা। এখন শুনছি যে, ৫০০ কোটি টাকার খেলা। যেটা হয়েছে, ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম ভাঙিয়ে ও যত টাকা তুলেছে, সব টাকাই হাওয়ালাতে খাটাচ্ছে এটাও জানবেন।' তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই টাকা কে খাটাচ্ছেন? জবাব আসে, কুন্তল ঘোষ। কখনও তাপস, তো কখনও কুন্তল...
কেউ গ্রেফতারির আগে, তো কেউ পরে একে অন্যকে আক্রমণ করে এসেছেন বরাবর। বর্তমানে দু'জনেই জেলবন্দি। কিন্তু, তাতেও থামেনি আক্রমণের পালা!! নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বৃহস্পতিবার শান্তিপ্রসাদ সিন্হা, নীলাদ্রি ঘোষের পাশাপাশি কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডলকেও আলিপুর বিশেষ CBI আদালতে তোলা হয়েছিল। কোর্ট লক আপ থেকে আদালত কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পথে, কুন্তল সম্পর্কে বিস্ফোরক দাবি করেন তাপস। 

আর কী?
এতেই শেষ নয়। তাপসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আর কে কে যুক্ত রয়েছে? তিনি বলেন, 'যুক্ত নয়, ও নিজেই এইসব কীর্তি করছে। এটা তদন্ত হোক, আমি চাইছি। ও তো বলছে, ইডি, সিবিআই আমার টিকিও পাবে না। আমার টাকা সব হাওয়ালায় খাটছে। তাহলে সেটার তদন্ত হোক, আমি চাই।' কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের নাম বলানোর জন্য় চাপ দেওয়া অভিযোগ তুলে, ইতিমধ্যেই নিম্ন আদালত ও হেস্টিংস থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন জেলবন্দি কুন্তল ঘোষ। তাঁর দুটি অভিযোগপত্র নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল ED. গত ১৩ এপ্রিল সেই প্রসঙ্গটি ওঠে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসেও। সেদিন বিচারপতি বলেছিলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ২৯ মার্চের বক্তব্যও তদন্তের বাইরে থাকা উচিত নয়। একইসঙ্গে তিনি প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে CCTV ফুটেজ ও ভিজিটর বুকের রেকর্ড জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ মতোই, বৃহস্পতিবার, কলকাতা হাইকোর্টে ৩টি হার্ড ডিস্ক ও ভিজিটার বুক জমা দেওয়া হয় হাইকোর্টে। সমস্ত রেকর্ড মুখবন্ধ খামে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রীয় এজেন্সির জিজ্ঞাসাবাদের উপর সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে। তাই হাইকোর্টে কুন্তলের অভিযোগপত্র সংক্রান্ত শুনানিও, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর হবে।একদিকে তাপস মণ্ডল যখন কুন্তলের নামে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ তুলছেন, অন্যদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে আংটি থাকা নিয়েও, CBI-এর বিরুদ্ধে সরব হন কুন্তল ঘোষ। কিন্তু বিশেষ CBI আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় এদিন তাপসের আইনজীবীকে বলেন,বাইরে ঢাক ঢোক না পিটিয়ে, যা বলার তা যেন তাঁর সামনেই বলা হয়।

আরও পড়ুন:'মুখ্য়মন্ত্রীর কল রেকর্ড প্রকাশ্য়ে আনতে চাই না, আদালতে যাক তৃণমূল', ফোন বিতর্কে চ্যালেঞ্জ শুভেন্দুর