সুকান্ত মুখোপাধ্যায়, প্রকাশ সিন্হা ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: টেট-দুর্নীতির (TET Scam) মামলায় মানিক ভট্টাচার্যর (Manik Bhattacharya) ঘনিষ্ঠ তাপস মণ্ডলের (Tapas Mondal) বয়ান রেকর্ড করেছে ইডি (Enforcement Directorate)। এবার সেই তাপস মণ্ডলই এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে একের পর বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনলেন। তাঁর দাবি, অফলাইন রেজিস্ট্রেশনের নামে ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে নেওয়া হয়েছিল কোটি কোটি টাকা। আর সেই টাকা ব্যক্তিগত কাজে লাগিয়েছিলেন মানিক ভট্টাচার্য। 


এবিপি আনন্দ-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক তাপস


দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই তদন্তকারীদের সামনে হাজিরা দিয়েছেন তাপস। সোমবার এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "মানিকবাবু সভাপতি হিসেবে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বা করেছেন সেটা ওঁর ব্যক্তিগত। উনি ২০ কোটি ৭৩ লক্ষ টাকা নিয়ে কী করেছেন, আমি জানি না। এখন বুঝতে পারছি, ব্যক্তিগত কাজে তা ব্যবহার করেছেন।'


মানিক-মামলায় এখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের প্রধান হাতিয়ার তারই ঘনিষ্ঠ তাপস। আর সেই তাপস মণ্ডলই এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি সভাপতি সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন!


টেট-দুর্নীতির মামলায় মানিককে গ্রেফতার করেছে ইডি। তাঁর ঘনিষ্ঠ অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাচিভার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তাপসকেও দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।


এ বার প্রথম এবিপি আনন্দে মুখ খুললেন সেই তাপস মণ্ডল। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি আদালতে দাবি করেছিল, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রাজ্যের ছ’শোর বেশি D.EL.ED কলেজে অফলাইনে ভর্তির জন্য পড়ুয়া পিছু ৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। সেই নগদ টাকা সরাসরি পৌঁছে গেছিল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের তত্কালীন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যর কাছে। 


আরও পড়ুন: Hooghly News: ভেঙে পড়ল প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো চন্দননগর কোর্টের ছাদের একাংশ, ক্ষোভ উগরে 'নয়া বিল্ডিংয়ের' দাবি


এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, এনিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন তাপস। তাঁর কথায়, "Abtta এর অধীনে ৩৫০ কলেজ রয়েছে। মোট আসন সংখ্যা ৪২ হাজার ৫০০। অনলাইন ভর্তিতেসব সংখ্যা ফিলআপ হয় না। সেই কারণে ২০১৮ সাল থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় অফলাইন কলেজগুলিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হবে। এই নিয়ে কলেজগুলি আমাকে জানায়। কলেজ কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা ছিল, আসন না পূর্ণ না হলে কলেজগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। সেই কারণে আমি পর্ষদ সভাপতি মানিকবাবুর সঙ্গে আলোচনায় বসি। সিদ্ধান্ত হয় ৪ হাজার ৭০০ টাকার বিনিময়ে অফলাইন ভর্তি নেওয়া হবে। Ncte guideline-এর নিয়মের বাইরে এই সিদ্ধান্ত ছিল সেটা মানছি। বেআইনি কাজ মানিকবাবুও করেছিলেন, আর আমরাও করেছি।"


তাপসের দাবি, টাকার বিনিময়ে হাজার হাজার প্রার্থীকে অফলাইন ভর্তি নেওয়া হয়। আর সেই বিপুল টাকার পুরোটা নগদে মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পৌঁছেছিল বলেও বিস্ফোরক দাবি করেছেন তিনি। বলেন, "২০১৮-২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৪০ হাজার ছাত্র-ছাত্রী অফলাইন মাথাপিছু ৪ হাজার ৭০০ টাকা নিয়ে ভর্তি করা হয়। দফায় দফায় সেই ভর্তির টাকা কলেজগুলির তরফে আমার কাছে আসে। মহিষবাথানের অফিস থেকে সেই টাকা মানিকবাবু লোক পাঠিয়ে নিয়েছেন। নগদ টাকা, কোনও ব্যাঙ্ক মারফত বা চেকে এই payment হয়নি। সেই টাকা তিনি কী করেছেন, তিনি জানেন।"


২১ কোটি টাকা হাতিয়েছেন মানিক!


এ দিকে, তাপসের দুই হিসাব রক্ষককেও এবার তলব করেছে ইডি। বৃহস্পতিবার তাঁদের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। ইডি সূত্রে দাবি, দুই হিসাব রক্ষক গৌতম দাস এবং তাপস মিশ্র মূলত মহিষবাথানের অফিসে বসতেন। তাঁরাই নগদ টাকার লেনদেন দেখতেন বলে ইডি সূত্রে দাবি।