কলকাতা: ঘর গেছে, তার সঙ্গে হারিয়ে গেছে শেষ সম্বলটুকুও। কয়েক ঘণ্টার মধ্য়ে শেষ হয়ে গিয়েছে গোটা জীবনের সঞ্চয়। চোখের জল আর বাধ মানছে না। তপসিয়ার (Tapsia Fire) মজদুর বস্তির বাসিন্দাদের চোখে মুখে এখন শুধুই হারানোর যন্ত্রণা।
হাহাকার তপসিয়ার মজদুর বস্তিতে: বছরের শেষটা সবটা শেষ করে দিয়ে দিল। পুড়ে ছাই হয়ে গেল মাথা গোঁজার আশ্রয়, চলে গেল শেষ সহায়-সম্বলটুকুও। কালও যা ছিল, আজ তার অবশিষ্টটুকুও নেই। নতুন করে শুরু করার কথা ভাবতে গেলেও কেঁপে উঠছেন EM বাইপাস লাগোয়া সায়েন্স সিটির পিছনে মজদুর বস্তির বাসিন্দারা। এখানকারই বাসিন্দা মহম্মদ সোলেমান। পেশায় গাড়িচালক। ২ ছেলে পরীক্ষার রেজাল্ট ভাল হয়েছে। সেই খুশিতে বড়দিনে কেক নিয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু তা আর হল না। নিক্কোপার্কের কাছ থেকেই দেখলেন দূরে জ্বলছে সবকিছু। এখানকারই বাসিন্দা নাজদা বেওয়া। ১২ জানুয়ারি তাঁর মেয়ের বিয়ে। অমানসিক পরিশ্রম করে, একটু একটু করে টাকা জমিয়ে একজোড়া সোনার কানের দুল আর একজোড়া রূপোর পায়ের তোড়া বানিয়েছিলেন। আগুনে শেষ সব। তাঁর কথায়, "আমরা বাড়িতে ছিলাম। আগুন লাগল, তখন বাচ্চাদের আর ডকুমেন্টস নিয়ে ছুটেছি। মাথা কাজ করেনি তখন আর। জিনিস, টাকা, না গয়না নাকি জীবন বাঁচাব!''
আগুনে সর্বস্ব হারিয়েছেন পারভিন বিবি ও শেখ পারভেজ হোসেন-ও। দুজনে হাওয়াই চটির ফিতে কাটার কাজ করেন। দেড়মাস আগে মেয়ের জন্য সেলাইয়ের মেশিন কিনেছিলেন। সর্বগ্রাসী আগুনে গলে গিয়েছে মেশিন। ১০ বছর আগেও লেগেছিল আগুন। সেবার হাড়ি, কড়াইটুকু বাঁচাতে পেরেছিলেন। এবার তাও হয়নি। তিনি বলেবন, "এক দেড় মাস আগে মেশিন কিনেছি। মেয়ে মেশিনে সেলাই করছিল। মেশিনটা বের করতে পারিনি পুরোটা।'' মজদুর বস্তির আরেক বাসিন্দা আবেদা বিবি। পরিচারিকার কাজ করেন। যখন পাশের বহুতলে কাজ করছিলেন, তখনই দেখতে পান আগুনের লেলিহান শিখা। দৌড়ে আসতে আসতে সব শেষ। আবেদা বিবি বলেন, "ধোঁয়া দেখেই ছুটে এসেছি। কিন্তু কিছু করতে পারিনি।'' সব হারানোর তালিকায় রয়েছেন টুকটুকি খাতুনও। স্বামী গাড়িচালক। তারও সব কিছু পড়ে ছাই। টুকটুকি খাতুনের কথায়, "স্কুলে গেছিলাম বাচ্চাদের নিয়ে রেজাল্ট আনতে। এসে দেখি পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে।''
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।
আরও পড়ুন: Rabindra Sarobar: সঙ্কটে মহানগরের ‘ফুসফুস’? রবীন্দ্র সরোবরে বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ