সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা: দলের অস্বস্তি আরও বাড়ালেন তাপস রায়। বর্তমান ছাত্রনেতাদের আচরণ নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য বরানগরের তৃণমূল বিধায়কের। ভাইরাল ভিডিও ঘিরে বিতর্ক। গতকাল নিজের বিধানসভায় শিক্ষকদের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে তাপস রায় বলেন, আমি যখন দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রভাবশালী ছাত্রনেতা তখন কলেজের অনুষ্ঠানে ব্লেজার পরতে না চাওয়ায়, অধ্যক্ষ চড় মেরেছিলেন। আজকে এমনটা হলে অধ্যক্ষ চড় মারবেন তারপর বাড়ি ফিরে যাবেন, ভাবা যায়! কার্যত দলের ছাত্রনেতাদের দিকেই ইঙ্গিত তৃণমূল বিধায়কের। সামাজিক অবক্ষয়ের কথা বলতে গিয়ে বিধায়কের মন্তব্য, সমাজকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষক, ছাত্ররা এই অবক্ষয়ের শিকার হলে দেশ এবং সমাজের সর্বনাশ।
৩ জনই পারেন একটি দেশ বা জাতিকে বদলাতে। তাঁরা হলেন বাবা-মা ও শিক্ষক! এই কথাটি বলেছিলেন, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম। সেই ‘শিক্ষক দিবসে’র আগের দিন, শিক্ষকদের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে বর্তমান ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক ও এখনকার ছাত্র-নেতাদের নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক ও বিধানসভায় তৃণমূলের উপ মুখ্য সচেতক তাপস রায়। ভাইরাল ভিডিও ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের বলেন, আমি তখন দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী, পাড়ার ছেলে, জেনারেল সেক্রেটারি, তাকে একটা চড় মারলেন প্রিন্সিপাল। আজকের দিনে ভাবতে পারেন, কলেজের জেনারেল সেক্রেটারি, ছাত্র পরিষদের ইউনিয়ন, তার গালে একটা চড় দেবেন প্রিন্সিপাল। তারপর প্রিন্সিপাল বাড়ি ফিরে যাবেন? এটা আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলব যে, সেই শিক্ষকও নেই, সেই ছাত্রও নেই। এরকম গোছের একটা ছাত্র সমাজ হয়েছে। শিক্ষকরাও কিন্তু সেই আগের শিক্ষক নেই। সমাজের অবক্ষয় তো সর্বত্রই পৌঁছেছে। কিন্তু যদি সমাজ কর্মী, রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষক, ছাত্র, এদের মধ্যে বেশি মাত্রায় পৌঁছয়, সেটা কিন্তু সর্বনাশা সমাজের জন্য এবং দেশের জন্য।
কাদের বার্তা দিলেন তৃণমূল বিধায়ক? দলের ছাত্রনেতাদের? এর আগে, রবিবারই বরানগরের একটি অনুষ্ঠানেও তাঁর করা মন্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে তাপস রায়কে সমর্থন করেছেন তৃণমূল নেতা ও ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিং।
শিক্ষার জন্য, প্রগতির জন্য, মানবকল্যাণের জন্য নিজের সমস্ত জীবন নিবেদন করা ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মদিনের দিন ৫ই সেপ্টেম্বর, পালিত হয় শিক্ষক দিবস!
রাজ্যের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রনেতাদের তাণ্ডবের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে বহুবার। ৩০ অগাস্ট, ২০২২। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর কলেজে অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের টেবিল চাপড়ে হুমকি দিতে দেখা যায় টিএমসিপির ব্লক সভাপতি বিট্টু মল্লিককে। কলেজ সূত্রে খবর, বকেয়া DA-এর দাবিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন সংগঠনের পাশাপাশি, এই কলেজে কর্মবিরতি পালন করছিলেন অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের একাংশ। সেখানে হাজির হয়ে দ্রুত অধ্যাপক-অধ্যাপিকাদের ক্লাসে যাওয়ার জন্য হুমকি দেন টিএমসিপি নেতা। ভিডিও ভাইরাল হতেই শুরু হয় বিতর্ক। এর আগে চলতি বছরের ১ এপ্রিল, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের ঘরে ঢুকে টিএমসিপি-র বহিষ্কৃত ছাত্র নেতাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও খুনের হুমকি দিতে শোনা যায়। ভিডিও ভাইরাল হতেই তোলপাড় পড়ে যায়।
কী প্রতিক্রিয়া বাকিদের: তৃণমূল আমলে শিক্ষায় দুর্বৃত্তায়ন, মন্তব্য রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যর। বিলম্বে বোধোদয়, প্রতিক্রিয়া সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর। বিজেপির আমলে শিক্ষায় গৈরিকীকরণ হয়েছে। বাম আমলে শিক্ষা ব্যবস্থাকে শেষ করে দেওয়া হয়েছিল। পাল্টা আক্রমণ তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের।