হাওড়া: বক্স খাটে চাদর-বালিশের বদলে থাকত নোটের বাণ্ডিল। থরে থরে সাজানো ৫০০, ২ হাজারের নোট। শিবপুর মন্দিরতলার কৈপুকুরে ব্যবসায়ী ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শৈলেশ পাণ্ডের ফ্ল্যাটের ৩টি ঘরেই মিলেছে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। ৩টে ঘরে ৩টে বক্স খাট। সেখানেই মিলেছে ৫ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা। পুলিশ সূত্রে খবর, গতকাল রাতে যখন এই ফ্ল্যাটে হানা দেন তদন্তকারীরা, তখন বাইরে কোলাপসিবল গেটে তালা লাগানো থাকলেও, ঘরের দরজা শুধুমাত্র ভেজানো ছিল।


কোথাও খাটের নীচে লুকিয়ে রাখা ছিল ১৭ কোটির বেশি! কোথাও মাছ ব্যবসায়ীর বাড়িতে মিলেছে কোটির বেশি! ১০ সেপ্টেম্বর, গার্ডেনরিচের পরিবহণ ব্যবসায়ী আমির খানের সাদামাটে এই দোতলা বাড়ির খাটের নীচ থেকে উদ্ধার হয় ১৭ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। এই ঘটনার কয়েকদিন আগে মালদার গাজোলে মাছ ব্যবসায়ী জয়প্রকাশ সাহার বাড়িতে হানা দেয় CID। উদ্ধার হয় ১ কোটি ৩৯ লক্ষেরও বেশি টাকা! গত দোসরা সেপ্টেম্বর, উত্তর ২৪ পরগনার হালিশহরে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার চেয়ারম্যান রাজু সাহানির বাড়ি ও রিসর্টে হানা দেয় CBI। উদ্ধার হয়, নগদ ৮০ লক্ষ টাকা! এ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।


কী জানা গেল? গত কাল শিবপুরের মন্দিরতলায় টাকার পাহাড়ের হদিশ মিলেছিল। নগদে ৮ কোটি ১৫ লক্ষ ছাড়াও দুটি ফ্রিজ করা অ্যাকাউন্টে আরও ২০ কোটি টাকা পাওয়া যায় বলে খবর। শিবপুরের অভিজাত আবাসন ক্লাব টাউন রিভারডেলে ব্যবসায়ী ও পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শৈলেশ পাণ্ডের গাড়ি থেকে নগদ ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছিল।


রাতে মন্দিরতলায় ব্যবসায়ীর আরও একটি ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে নগদ ৫ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ। বক্স খাটের মধ্যে লুকিয়ে রাখা আটটি ব্যাগের মধ্যে ছিল টাকা। উদ্ধার প্রচুর সোনার গয়না। রহস্যজনক লেনদেন নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের করা অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল এই বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধার করে কলকাতা পুলিশ। সপরিবারে পলাতক ব্যবসায়ী শৈলেশ পাণ্ডে। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, এই বিপুল পরিমাণ টাকা এসেছিল বিদেশ থেকেই। তাঁদের ধারণা, কালো টাকা সাদা করতে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। আর শৈলেশ পাণ্ডেই ছিলেন সেই সমস্ত অ্যাকাউন্টের ইনট্রোডিউসার। মূলত তাঁর মাধ্যমেই চলত কালো টাকা সাদা করার কারবার, অনুমান পুলিশের। 

কোথা থেকে এল?
টাকার উৎস নিয়ে মোটামুটি জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। সবটা খতিয়ে দেখে তাঁদের ধারণা, কোনও ধরনের আর্থিক তছরুপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ওই ব্যবসায়ী। ভুয়ো নথি দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ভুুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলতেন শৈলেশ, ধারণা তদন্তকারীদের। শৈলেশের ফ্ল্যাট এর মধ্যে সিল করা হয়েছে।


গত কাল যখন কলকাতা পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল তখন কেমন ছিল পরিস্থিতি? এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, 'কোলাপসিবল গেট বন্ধ ছিল, তবে তার ভিতরের দরজা বন্ধ ছিল না। ঠেলতেই খুলে যায়। আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। ভিতরে যাওয়ার পর তল্লাশি করা হয়। খাটের প্লাইয়ের ভিতর ব্যাগগুলি রাখা ছিল। তার মধ্যেই রাখা ছিল টাকা।' ওই প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ফ্ল্যাটে মোট তিনটে খাট ছিল। তিনটে থেকেই বিপুল পরিমাণ টাকার হদিশ মিলেছে। তাঁর দাবি, অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে চিনতেন। কিন্তু শৈলেশ আশপাশে কারও সঙ্গে সে ভাবে মিশতেন না। তবে তিনি যে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট সেটা সকলেই জানতেন। কিন্তু তাঁর ফ্ল্যাটের একটি দরজা কেন খোলা ছিল? কেনই বা থরে থরে টাকা বাড়িতে এভাবে রাখা? উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। তবে গোটা ঘটনায় হইচই পড়ে গিয়েছে লাগোয়া এলাকায়। কেউ বিশ্বাসই করতে পারছেন না, এমন কিছু ঘটতে পারে।