কলকাতা :  লোকসভা ভোটে তৃণমূলের জয়জয়কার। প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপিকে ১২ টি আসনে আটকে দেওয়া। তারপর বিধানসভার ৪ টি আসন উপনির্বাচনে চারে চার তৃণমূল। একের পর এক জয়ের পর ধর্মতলায় প্রথম একুশের সমাবেশ। আর মাত্র ২ দিন বাকি। শুরু কাউন্টডাউন। সেজে উঠেছে ধর্মতলা। তৃণমূলের মেগা ইভেন্টের আগে শহরজুড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেওয়া হোর্ডিং। শহরে ফিরলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। 


৩১ বছর আগে এই ২১ জুলাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা কর্মসূচি ঘিরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল এই ধর্মতলা।  পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। সেই ঘা এখনও দগদগে। তখনও তৃণমূলের জন্ম হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। সেই ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিতে শহরে বিভিন্ন স্থানে ছবি সহ হোর্ডিং দিয়েছে তৃণমূল। উদ্দেশ্য আজকের জেনারেশনকে একুশের গুরুত্ব বোঝানো। নেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের ইতিহাসটা তুলে ধরা ।


১৯৯৩ সাল।  রাজ্যের ক্ষমতায় জ্যোতি বসুর সরকার। সিপিএমের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিংয়ের মতো অভিযোগ নিয়মিত শোনা যেত সে-সময় বিরোধীদের মুখে। আর সেই সময় বিরোধীপক্ষের অন্যতম লড়াকু মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য, সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে এই কর্মসূচির দিন ঠিক হয়ে ছিল ১৪ জুলাই। কিন্তু, ওই সময় প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের প্রয়াণের কারণে, কর্মসূচির দিন পিছিয়ে ২১ জুলাই করা হয়।


সেদিনের ঘা-টা এখনও দগদগে বাংলার রাজনীতিতে। ২১ জুলাই সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিযানের জন্য জমায়েত শুরু হয়।  কলকাতার পাঁচটি জায়গা থেকে যাত্রা শুরু হয়।  এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। পুরোভাগে ছিলেন মমতা নিজে।  বিভিন্ন মিছিলে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্ররা।  মহাকরণে পৌঁছনোর আগে পাঁচ দিক থেকে ইব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তাতেই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়।  ধুন্ধুমার শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘাত বেঁধে যায় যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের। 


পুলিশি বাধা ঠেকাতে শুরু হয় ইট-পাথরবৃষ্টি। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। সবমিলিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মেয়ো রোড-রেড রোডের মোড়ে। বোমাও পড়ে। সারা কলকাতা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। অশান্তির ভরকেন্দ্র ছিল মধ্য কলকাতা। ধীরে ধীরে সারা কলকাতা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের ভ্যানে অগ্নি সংযোগের মতো ঘটনাও ঘটে। বিক্ষোভকারীরা এগোতে থাকে, পিছু হঠতে শুরু করে পুলিশ। তখন  গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশবাহিনী। আর তাতেই প্রাণ যায় ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। 


কার নির্দেশে পুলিশ সেদিন গুলি চালিয়েছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি ।   


আরও পড়ুন :


খামখেয়ালি বর্ষা ! তৃণমূলের ২১ জুলাইয়ের সভার সময় 'পয়মন্ত' বৃষ্টি হবে তো?