আশাবুল হোসেন, রঞ্জিত সাউ ও সৌমিত্র রায়, কলকাতা: কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়া বিতর্ক নিয়ে সরগরম রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ৯৭ হাজার কোটি টাকা পাওনার (97 thousand crores Due) দাবি উড়িয়ে দিল বিজেপি (BJP)। গেরুয়া শিবিরের দাবি, বকেয়া ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলায় হেরে গেছে বলে পাওনা মেটাচ্ছে না মোদি সরকার, তীব্র আক্রমণ তৃণমূলের।
প্রাপ্য বকেয়া নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজা
মোদি সরকারের কাছে বাংলার বকেয়া ঠিক কত? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করছেন, কেন্দ্রের কাছে রাজ্য সরকারের বকেয়ার পরিমাণ ৯৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অন্যদিকে, বিজেপির দাবি বাংলা সরকার পায় মাত্র ৪ হাজার ২৯২ কোটি টাকা।
আর এই বকেয়া বিতর্ক নিয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে সুর আরও চড়াল বিজপি ও তৃণমূল। বিতর্কের সূত্রপাত বুধবার। করোনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে, পেট্রোপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির দায় কার্যত বিরোধীদের হাতে থাকা রাজ্যগুলির ওপর চাপিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর গলায় উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গের কথাও। মোদি বলেন, "গত নভেম্বরে রাজ্যগুলোর কাছে ভ্যাট কমানোর আবেদন জানিয়েছিলাম। আমি আবেদন করেছিলাম, রাজ্যবাসীর ভালর জন্য। মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল, ঝাড়খণ্ড কোনও না কোনও কারণে তাঁরা এই কথা শোনেননি। রাজ্যবাসীর বোঝা লাঘব হয়নি।"
এর পর পাল্টা কেন্দ্রের কাছে রাজ্য সরকারের বকেয়া পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। বলেন, "কেন্দ্রের কাছে ৯৭ হাজার কোটি টাকা পাই। রাজ্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে সাধু সেজেছে.....রাজ্যের উপরে বোঝা না চাপিয়ে নিজের দিকে দেখুন।
আরও পড়ুন: প্রয়াগরাজের কথা তোলায় বাংলার দোহাই! মানবাধিকার কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৃণমূলের
বকেয়ার এই পরিমাণ নিয়েই পাল্টা প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। বাংলায় বিজেপি-র সহ পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য ট্যুইট করে বলেছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বকেয়া ৯৭ হাজার কোটি টাকার এই অঙ্ক কোথা থেকে পেলেন? এটা কি ওঁর কল্পনাশক্তির পরিচয়? ওঁর উচিত, মিথ্যে কথা বলা বন্ধ করা এবং পেট্রোল-ডিজেলের ওপর ভ্যাট কমানো।" ট্যুইটের সঙ্গে একটি নথিও শেয়ার করেন অমিত। তাতে GST ক্ষতিপূরণ বাবদ বাংলার বকেয়া দেখানো হয়েছে ৪ হাজার ২৯২ কোটি টাকা।
অমিতের ওই ট্যুইট শেয়ার করে, পাল্টা তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার ট্যুইট করে বলেন, "পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে কেউ নিজের হোমওয়ার্ক ঠিকঠাক করেননি। চিন্তার কোনও কারণ নেই অমিত মালব্য, আমরা আমাদের দাবির পক্ষে সব নথি দেব। তার আগে আপনি নরেন্দ্র মোদির থেকে কেন তথ্য যাচাই করছেন না? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চ্যালেঞ্জ নিয়ে তিনি কী ভাবছেন? তিনি কি বাংলার বকেয়া দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন?"
টাকার অঙ্ক নিয়ে তরজা
এ দিনে রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, "আমিও জানতে চাইছি, ৯৭ হাজার কোটি টাকা এল কোথা থেকে? ৪৩ হাজার কোটি টাকা আমফান-সহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেলিকপ্টার চড়ে যে খরচ করেছে, সেই খরচও দাবি করেছেন। পার্টির লোককে সরকারি পয়সায় পুষবে আর সেই টাকা দিল্লি দেবে? অন্য রাজ্য কান্নাকাটি করে না।"
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, "কেন্দ্রের টাকা কি বিজেপি-র বাবার? বাংলার বকেয়া ৯৭ হাজার কোটির বেশি, প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। প্রত্যেক হেড ধরে হিসেব দিয়েছে। বাংলা যখন বলছে আমাদের প্রাপ্য দাও। দিচ্ছে না। বিজেপির রাজ্যকে দিচ্ছে, বন্ধু রাজ্যকে দিচ্ছে, কিন্তু বাংলাকে দিচ্ছে না। কেন? কারণ বাংলার মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।" সব মিলিয়ে বৈশাখের তীব্র দাবদহ যখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে, তখন বকেয়া বিতর্ক নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে উত্তেজনার পারদও চড়ছে।