অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সক্রিয় হয়েছে সিবিআই-ইডিআই। তাতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে আগেই অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। এ বার তার রেশ ধরা পড়ল 'খেলা হবে' দিবসেও। তাতে বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)-র প্রতিরূপ সাজিয়ে নামানো হল এক ব্যক্তিকে। তাঁর গায়ে সেঁটে থাকতে দেখা গেল 'আমি শুভেন্দু ,আমি চোর' লেখা ব্য়ানার। শুধু তাই নয়, কোমরে দড়ি পরিয়ে টানতে টানতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হল মিছিলে (Khela Hobe Divas)।
মঙ্গলবার তৃণমূলের 'খেলা হবে' দিবস। জেলায় জেলায় তা নিয়ে কর্মসূচি রয়েছে তাদের। এ দিন কলকাতার মানিকতলাতেও বিশেষ কর্মসূচি ছিল। মানিকতলা থেকে বার করা হয় মিছিল। তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় রাজাবাজার পর্যন্ত। আর সেই মিছিলেই শুভেন্দু বানিয়ে নামানো হয় ওই ব্যক্তিকে। তাঁকে ঘিরে ধরে স্লোগান দিতে দিতে এগোন তৃণমূলের নেতা কর্মীরা। ওই ব্যক্তির মুখ ছিল শুভেন্দুর মুখের আদলে তৈরি মুখোশে। কোমরে পরানো ছিল নাইলনের দড়ি।
এ দিনের ওই মিছিলে শামিল হন স্থানীয় কাউন্সিলর অয়ন চক্রবর্তীও। এবিপি আনন্দ-র মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানে উন্নয়ন। আজ খেলা হবে দিবসে আমরা রাস্তায় নেমে মানুষের কাছে তাঁর উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি তুলে ধরব। তুলে ধরব কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতি, পেট্রোল, গ্য়াস এবং জীবনদায়ী ওষুধের দাম বৃদ্ধির কথা।"
মিছিল থেকে অয়ন আরও বলেন, "সিবিআই-ইডি-র কাছে নারদ মামলায় শুভেন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআর রয়েছে। সারদা মামলায় সংস্থার কর্ণধার সিবিআই-এর কাছে তাঁকে নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু তা নিয়ে সিিবআই এবং ইডি কোনও পদক্ষেপ করছেন। এ ভাবে সিবিআই-ইডি জুজু দেখিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই থামানো যাবে না।
এ নিয়ে ফোনে এবিপি আনন্দকে রাজ্য বিজেপি-র নেতা রাহুল সিনহা বলেন, "দেখুন, আজকের দিনটি ১৬ অগাস্ট। দ্যা গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের দিন। ঠিক উপযুক্ত জায়গাতেই মিছিল করছে তৃণমূল। তৃণমূলের যে চুরি, লুঠ, সন্ত্রাস, তা থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই, এমন কথা বলছে। এত টাকার পাহাড় হল কী ভাবে, মাছওয়ালা ৫ হাজার টাকার মলিক হয় কী ভাবে। অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই। অল্পদিনের মধ্যে যাদের সম্পত্তি হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যে নামগুল ইডি-কে দেখতে বলেছে হাইকোর্ট, এই বিষয়গুলি জানতে চায় মানুষ। তা থেকে মানুষের নজর ঘোরাতেই নতুন থিওরি আনা হচ্ছে।"
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল নেতাদের মুখে 'খেলা হবে' স্লোগান শোনা যায়। ভোটের পর ১৬ অগাস্ট দিনটি 'খেলা হবে' দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা হয়। তার জন্যই সকলে একজোট হয়ে রাস্তায় নেমেছে। তাতে কেন্দ্রীয় সংস্থার নিরপেক্ষতা নিয়েও ব্যানার হাতে মিছিলে যওগ দিয়েছেন অনেকে।
নিয়োগদুর্নীতি মামলায় পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশ বাড়িয়েছে তৃণমূল। কিন্তু অনুব্রতর ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। বরং খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।যদিও সুকান্তর দাবি, কান্তর মতে, "তাই সাগয়ল যে চক্র চালাত, বকলমে তা অনুব্রতই চালাতেন। তাঁকে দায় নিতে হবে। অপরাধী যিনি সাজা পাবেন।"
গরুপাচারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করলে বলেন, গরু, কয়লাপাচার প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। প্রশাসন প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ ভাবে এর সঙ্গে যুক্ত থাকে। কেউ ছাড় পাবে না। সকলকে আইনের আওতায় আনা উচিত। আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নই, মুখ্যমন্ত্রীও নন। যদি দেখা যায় তাঁর নাম জড়িয়ে যাচ্ছে, তাঁর বাড়িতেও সিবিআই, ইডি যাবে।"