কলকাতা: ফালাকাটায় বিজেপি নেতার বাড়িতে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ। বাগনানেও বিজেপি নেতার উপর হামলার ঘটনা। তাতে গতকাল থেকে তৃণমূলকেই দায়ী করে আসছে বিজেপি (BJP)। সেই আবহেই এ বার সটান রাজভবনে হাজির হলেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। আশঙ্কা নিয়েই রাজ্যপাল লা গণেশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আর রাজভবন থেকে বেরিয়েই তীব্র আক্রমণ করলেন তৃণমূলকে (TMC)। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, আদর্শের লড়াইয়ে পেরে উঠবে না জেনেই, তৃণমূল পুলিশকে সামনে রেখে হিংসা চালাচ্ছে বলে দাবি করেন সুকান্ত। 


সকাল সকাল রাজভবনে সুকান্ত মজুমদার এবং বিজেপি নেতারা


মঙ্গলবার সকালে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে রাজভবনে হাজির হন সুকান্ত। দলের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালও এ দিন রাজভবনে ছিলেন তাঁদের সঙ্গে। সেখান থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন সুকান্ত। তিনি বলেন, "আশঙ্কা নিয়েই রাজ্যপালের কাছে এসেছি। গতকাল থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে। যেভাবে একের পর এক মন্ত্রী, তৃণমূলের নেতারা চুরি, গরুপাচার এবংটাকা রাখার দায়ে ধরা পড়ছেন, তাতে আগামী দিনে হয়ত আরও বাড়বে। গণতান্ত্রিক ভাবে তৃণমূল সম্পূর্ণ ব্যাকফুটে। বাংলার বাসে, ট্রামে চোর চোর শব্দ শোনা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে হিংসাই একমাত্র আশ্রয় তৃণমূলের। গণতান্ত্রিক ভাবে লড়তে না পেরে, আদর্শের লড়াইয়ে পেরে উঠতে না পেরে, পুলিশকে সামনে রেখে এই কাজ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।"


২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল নেতাদের মুখে 'খেলা হবে' স্লোগান শোনা যায়। ভোটের পর ১৬ অগাস্ট দিনটি 'খেলা হবে' দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণা হয়। পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে অনুব্রত মণ্ডল, যেভাবে একের পর এক তৃণমূল নেতার নাম দুর্নীতিতে জড়িয়েছে, তাতে সোমবার ১৬ অগাস্ট সেই নিয়ে শাসকদলকে কটাক্ষ করেন সুকান্ত। বাংলাদেশের নির্বাচনী স্লোগান 'খেলা হবে'  বাংলায় টেনে এনেছিলেন অনুব্রতই। সেই নিয়ে সুকান্তর বক্তব্য, "তৃণমূল খেলতে চায়। তাদের খেলার লোকের অভাব নেই। কারণ পশ্চিমবঙ্গে যত গুন্ডা-মস্তান রয়েছে, তারা সব তৃণমূলের ছত্রছায়ায় রয়েছে। সবথেকে বড় গুন্ডা হচ্ছে তৃণমূলের পুলিশ। খেলতে আপত্তি নেই আমাদের। কিন্তু সমানে সমানে খেলা হওয়া উচিত। সমান মাঠ তৈরি করে দিন, বিজেপি ভাল খেলে দেবে। আমাদের বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দেওয়া হচ্ছে। ভাল ব্যাটিং করবে। পুলিশকে সরিয়ে দিন না, দেখি কত বড় খেলোয়াড় তৃণমূল!"


বাংলায় তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রসঙ্গ ১৫ অগাস্টের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখেও শোনা আয়। সেই নিয়ে সুকান্ত বলেন, "দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে লড়াই শুরু করেছেন মাননীয় নরেন্দ্র মোদিজি, সেই লড়াই চলছে, চলবে। বাংলা নয়, গোটা দেশে রাজনীতি যে রোজগারের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা ভাঙতে চাই। দু'-চারটি সেতু, রাস্তা তৈরি করতে আসেননি প্রধানমন্ত্রী। ভারতবর্ষের রাজনীতিকে পরিবর্তন করতে, ভারতবাসীর চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে দায়িত্ব নিয়েছেন। এতদিনের পারস্পরিক পিঠ চুলকে দেওয়ার প্রথা, একটি রাজনৈতিক পরিবার অন্য পরিবারের ক্ষতি করবে না, এই প্রথা থেকে থেকে ভারতের রাজনীতিকে বার করে আনতে হবে। পারিবারিক রাজনীতি থেকে বার করে আনতে হবে দেশকে।"


আরও পড়ুন: Jay Prakash Majumdar: গরুপাচারের নেপথ্যে অনুব্রতই, দাবি সুকান্তর, ব্যোমকেশ বক্সী হয়ে উঠছেন, পাল্টা জয়প্রকাশ


গরুপাচার মামলায় সিবিআই-এর চার্জশিটে অনুব্রত-যোগ উঠে এসেছে। দেহরক্ষী সায়গলের মাধ্যমে এই চক্রে তিনি যুক্ত ছইল বলে দাবি সিবিআই-এর। সেই প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেন, "সায়গল পুলিশের সাধারণ সাব ইনস্পেক্টর। তার পক্ষে এই চক্র চালানো সম্ভব নয়, যদি না রাজনৈতিক মদত থাকে পিছনে।  তাই সাগয়ল যে চক্র চালাত, বকলমে তা অনুব্রতই চালাতেন। তাঁকে দায় নিতে হবে। অপরাধী যিনি সাজা পাবেন।"


গরুপাচার মামলায় বীরভূমের প্রাক্তন, বর্তমান পুলিশ কর্তাদের উপরও সন্দেহ গাঢ় হচ্ছে সিবিআই-এর। একমন বেশ কয়েকজনের নাম ইতিমধ্যেই তাঁদের হাতে পৌঁছেছে বলে খবর। সুকান্তর মতে, "গরু, কয়লাপাচার প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব নয়। প্রশাসন প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষ ভাবে এর সঙ্গে যুক্ত থাকে। কেউ ছাড় পাবে না। সকলকে আইনের আওতায় আনা উচিত। আমিও আইনের ঊর্ধ্বে নই, মুখ্যমন্ত্রীও নন। যদি দেখা যায় তাঁর নাম জড়িয়ে যাচ্ছে, তাঁর বাড়িতেও সিবিআই, ইডি যাবে।"


গরুপাচারে অনুব্রতর ভূমিকা নিয়ে সরব সুকান্ত


নিয়োগদুর্নীতি মামলায় পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর সঙ্গে দূরত্ব ক্রমশ বাড়িয়েছে তৃণমূল। কিন্তু অনুব্রতর ক্ষেত্রে তা ঘটেনি। বরং খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। এ নিয়ে সুকান্ত বলেন, "চোর বাঁচাও আন্দোলন চলছে।" আগামী ৭ সেপ্টেম্বর এই নিয়ে নবান্ন অভিযান রয়েছে বিজেপি-র। মঙ্গলবার জেলাসফরে বেরোচ্ছেন সুকান্ত।