বিটন চক্রবর্তী, চণ্ডীপুর: স্কুলে না গিয়ে ডামি শিক্ষিকা দিয়ে চালাতেন ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার কাজ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্য ও প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক মানস প্রধানের বিরুদ্ধে উঠেছে এমনই গুরুতর অভিযোগ।  বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে চণ্ডীপুরে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের তরফে শোকজ করা হয়েছে তৃণমূল নেতা ওই শিক্ষককে (TMC Leader)। ঘটনাটি চণ্ডীপুর ব্লকের ভগবানখালি নিউ প্রাইমারি স্কুলের।


চণ্ডীপুরে বাসিন্দা ওই শিক্ষকের নাম স্বপন প্রধান। একদিকে তিনি চণ্ডীপুরের ভগবানখালি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহ শিক্ষক। অন্যদিকে আবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্য। স্থানীয় এলাকাতে ডাকাবুকো তৃণমূল নেতা হিসেবেই পরিচিত। তাই বছরের পর বছর স্কুলে ক্লাস না করেও শিক্ষক হিসেবে নিয়মিত মাইনে তুলতেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, মাসের শেষে স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় সারা মাসের সইও করে দিতেন। এমনকী স্কুলে পড়ানোর জন্য নিজের অবর্তমানে একজন ডামি শিক্ষিকাও রেখেছিলেন তিনি। নিজের আত্মীয় এক মহিলাকে তাঁর জায়গায় শিক্ষিকা হিসেবে রেখে ক্লাস করাতেন বলে অভিযোগ। 


বিষয়টি জানাজানি হতেই স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফে তাঁকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজ করে জানতে চাওয়া হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে কেন তিনি অনিয়মিত স্কুলে যেতেন? একজন শিক্ষিকাকে কেন তিনি নিয়োগ করেছিলেন? 


তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে স্বপন প্রধান বলেন, " এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সত্যি কী তা আমার খাতা কলমের রেকর্ড বলবে। আমি নিয়মিত ক্লাস করি। ২০২৩ সাল থেকে আমি জেলা পরিষদ সদস্য তার আগে তো আমি জেলা পরিষদ সদস্য ছিলাম না। অসুস্থতার কারণে আমি মেডিক্যাল লিভ নিয়েছিলাম। হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমি ছুটির লিখিত আবেদন করতে পারিনি। ফোনে প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তারপর থেকে নিয়মিত ক্লাস করছি। চিকিৎসা করে ফিরে আসার পর আমি ছুটির আবেদন করেছি ও মেডিক্যাল সার্টিফিকেটও জমা দিয়েছি। আমি একটা শোকজ নোটিশ পেয়েছি । তার উত্তরও দেব।"


অপরদিকে প্রধান শিক্ষক নিতাইচরণ মাইতির দাবি, কোনও ডামি শিক্ষিকা এখানে আসতেন না। একজন শিক্ষানুরাগী মহিলা স্বেচ্ছায় মাঝে মধ্যে আসতেন। উনি ক্লাস নিতেন না। স্কুল কমিটির অনুমতি নিয়ে তিনি মাঝে মধ্যে আসতেন। একজন শিক্ষানুরাগী হিসেবে মাঝে মধ্যে শিক্ষকদের সহযোগিতা ও ছাত্রদের পঠনপাঠনের সুবিধার জন্যে ক্লাস নেওয়ারও ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। উনি অন্য জায়গায় পড়িয়েছেন সেকারণে কমিটির অনুমতি নিয়ে ওনাকে মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের পড়াতে বলা হয়েছিল বিনা পারিশ্রমিকে। 


তবে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের নেতা মৃণালকন্তি সিনহা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন স্বপন প্রধান একজন ডামি শিক্ষিকাকে নিয়োগ করেছিলেন। তাঁর দাবি, স্বপনবাবু একজন সহ শিক্ষকের পাশাপাশি  জেলা পরিষদের সদস্য ও দায়িত্বশীল নেতা। শুনেছি বর্তমানে তিনি বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকার কারণে স্কুলের পঠনপাঠনে যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্য ডামি শিক্ষক দিয়েছিলেন।


এই বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) পঙ্কজ সরকার জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ওই শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। পরবর্তীতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


এদিকে এই ঘটনার কথা সামনে আসতে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শাসকদল তৃণমূলকে একযোগে আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপি ও সিপিএম।


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


আরও পড়ুন: Chitmahal News: ৬৮ বছর পর মিলেছিল মুক্তির স্বাদ, স্বাধীনতার দিনে আনন্দের ছবি কোচবিহারের ছিটমহলে