বোলপুর: কলকাতা থেকে বীরভূমের বাড়িতে ফেরা পর্যন্ত চোখে পড়েছিল উচ্ছ্বাস। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে এই মুহূর্তে বীরভূমের রাজনীতিতে টানটান উত্তেজনা। আবারও বীরভূমে তৃণমূলের সর্বেসর্বা হয়ে উঠবেন অনুব্রত, না কি কোর কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলবে তৃণমূল, উঠছে প্রশ্ন। আর সেই আবহেই ফের বীরভূমে তৃণমূলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে ঘিরে জল্পনা শুরু হল। বাইরের কেউ নন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জল্পনা উস্কে দিলেন কোর কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি খোদ কাজল শেখ। (Kajal Sheikh)


গরুপাচার মামলায় অনুব্রতর জেলযাত্রার পর গত দু'বছর ধরে বীরভূমে দলের খুঁটি শক্ত হাতে ধরে রেখেছিলেন কাজলই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর লোকসভা নির্বাচনেও সেখানে জয়ী হয়েছে জোড়াফুল শিবির। তাই অনুব্রতর প্রত্যাবর্তন ঘটলেও, কাজলকে ছেঁটে ফেলার সাহস দল করবে না বলে মনে করা হচ্ছে। অনুব্রত বনাম কাজল শিবিরের মধ্যেকার সমীকরণ নিয়ে কাটাছেঁড়াও চলছে। আর সেই আবহেই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করতে শোনা গেল কাজলকে। (Anubrata Mondal)


বুধবার রাতে নানুরে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন কাজল। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "কোনও গ্রুপবাজি বরদাস্ত করব না। সুতো ছেড়ে রেখেছি। যেদিন গোটাব, বুঝবে আমি কী জিনিস। অনেক ঘাটের জল আমার পেটে আছে। পাঙ্গা নিতে এসো না। আমি চুড়ি পরে বসে নেই। যেদিন গোটাব, একেবারে গুটিয়ে দেব। আমি লোকের জায়গা জোর করে দখল করতে আসিনি, পঞ্চায়েতে পার্সেন্টেজ খেতে আসিনি।"


কাজল আরও বলেন, "আমার চাওয়া-পাওয়া কিছু নেই। আমি সাধারণ ছেলে, নেতা সাজতে আসিনি। দয়া করে গ্রুপবাজি করতে আসবেন না। আমি সব খেলা খেলতে জানি, দাবা খেলতে জানি, হাডুডু-ও খেলতে জানি। খেলা হবে গান শুনে লাভ হবে না বন্ধু।" অনুব্রত বাড়ি ফেরার পরই নানুরে ফের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে কেরিম খানের। কেরিমকে নিশানা করেই কাজল এমন মন্তব্য করেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কিন্তু অনুব্রতকেও কি বার্তা দিলেন কাজল? উঠছে সেই প্রশ্নও। 


কারণ, একদিন আগে বোলপুরে দলীয় কার্যালয়ে অনুব্রত যে বৈঠক করেন, সেখানে কাজলের অনুপস্থিতি কারও চোখ এড়ায়নি। আর তার পরই রাতে এই মন্তব্য। অন্য দিকে, অনুব্রতর প্রত্যাবর্তনে নানুরে ফের যেভাবে সক্রিয় হয়ে উঠছেন কেরিম, তাও কাজলের না পসন্দ বলে শোনা যাচ্ছে। কেরিম এবং তিনি, দু'জনই নানুরের লোক। কিন্তু অনুব্রতর সঙ্গে যে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে কেরিমের, কাজলের তা নেই। অনুব্রতকে দেখতে বার বার দিল্লিও ছুটে গিয়েছিলেন কেরিম। তাই অনুব্রত এবং কেরিমের সামনে তিনি পিছু হটছেন না বোঝাতেই কাজল এমন বার্তা দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।