কলকাতা: সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের পর এবার সাংবাদিক বৈঠকেও বিস্ফোরক কুণাল ঘোষ। আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুতে কর্তৃপক্ষের একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন তিনি। এমন কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে, যাতে মানুষ ভুল বুঝছেন বলে দাবি করলেন তিনি। পাশাপাশি, বিরোধীদের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগও তুললেন কুণাল। (Kunal Ghosh)
শনিবার মাইক্রোব্লগিং সাইট X-এ প্রথম ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেন কুণাল। দলের ভাবমূর্তি উদ্ধারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অগ্রভাগে দেখতে চেয়ে আবেদন জানান। এর পর দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, "এমন দু'-একটি পদক্ষেপ করা হয়েছে, যাতে মানুষ আমাদের ভুল বুঝেছেন। বাম-রামের চক্রান্তে সেই ভুল বোঝাটাকে বিকৃত রাজনৈতিক কুৎসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।"(RG Kar Medical Student Death)
ঘটনার নিহত তরুণীর পরিবারকে 'আত্মহত্যা'র তত্ত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের দেহ দিতেও দেরি করা হয় বলে এমন একাধিক অভিযোগ সামনে এসেছে। সেই নিয়েও এদিন মুখ খোলেন কুণাল। তাঁর কথায়, "প্রথমে যাঁরা দেহ দেখতে পেয়েছিলেন, সঠিক ভাবে তাঁরা তথ্য বেরোতে দেননি, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছতে দেননি তথ্য। সন্দীপ ঘোষের সকালবেলা পদত্যাগ বা অপসারণ এবং বিকেলেই ন্যাশনাল মেডিক্যালের অধ্যক্ষ করা...আমি সেদিনই বলেছিলাম, এই তাড়াহুড়ো না বলেই ভাল হতো।"
কুণাল জানিয়েছেন, এই কিছু পদক্ষেপেই মানুষ তাঁদের ভুল বুঝতে শুরু করেছেন। সত্য ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। কুণালের বক্তব্য, "যে পাপ তৃণমূলের ঘাড়ে আসে না, মমতাদির ঘাড়ে আসেই না, কিছু সিদ্ধান্তের জন্য মানুষ ভুল বুঝছেন। তাঁদের আবেগকে গুরুত্ব না দিয়ে কিছু একটা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে তাঁদের।"
ওই ঘটনার পর আর জি করের সেমিনার হলের পাশের একটি ঘরে সংস্কারের কাজ শুরু করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কুণালও সেই নিয়ে মুখ খুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, "সেদিন রাতে সেমিনার হল অক্ষত ছিল। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের কোন নির্বোধ ওখানে পিডব্লিউডি-কে কাজ করতে দিল? কেন দিল? তথ্যপ্রমাণ লোপাটের বিষয় নেই, কিন্তু অকারণে বিরোধীদের প্রচার করার সুযোগ দিলাম। সেমিনার হল অটুট রয়েছে, তদন্তে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু ওই দিনই সংস্কারের কাজ করার কী প্রয়োজন ছিল? এই ধরনের ভুলত্রুটিগুলি নেতিবাচক ভাবে নিয়েছেন মানুষ।"
আর জি করের ঘটনায় জোড়াফুল নেতৃত্বও পথে নেমেছেন। কিন্তু সেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা যায়নি। সেই নিয়ে সকালেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট করেন কুণাল। সাংবাদিক বৈঠকেও জানান, অভিষেককে এই পরিস্থিতিতে সামনে দেখতে চাইছেন তৃণমূলের সাধারণ কর্মীরা। মমতার নেতৃত্বে এবং অভিষেকের সেনাপতিত্বে ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই হোক।
বাম এবং রামের সঙ্গে মিলে কিছু অশুভ শক্তিও ভুয়ো খবর, ভুয়ো অডিও এবং কুৎসা ছড়াচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন কুণাল। যদিও বিজেপি এবং সিপিএম তাঁর এই দাবিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এখন এসব দাবি করা হচ্ছে বলে মত তাদের। সিপিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য় সুজন চক্রবর্তী পাল্টা কুণালকে প্রশ্ন করেন যে, ভুল পদক্ষেপ হয়েছিল বলে যখন মেনেই নিচ্ছে তৃণমূল, সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ কেন ছাড়বেন না মমতা?
কুণাল অভিষেককে সামনে আনার যে দাবি করেছেন, সেই নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে বিভাজন ঘটছে কি না, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও এই জল্পনা খারিজ করে দেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। ফিরহাদের দাবি, অভিষেক সক্রিয়ই আছেন। স্বাস্থ্যজনিত কারণে মুখ দেখাচ্ছেন না। তাঁদের বয়স হচ্ছে। আগামী দিনে অভিষেকদেরই নেতৃত্ব দিতে হবে বলেও মন্তব্য় করেন ফিরহাদ।
অন্য দিকে শোভনদেব জানান, যা কিছু বিবৃতি আসছে, মমতা-অভিষেকের তরফেই হচ্ছে। মমতা মিছিল ডেকেছিলেন সকলেই এসেছিলেন। মমতা-অভিষেকের ছবিও ছিল। মমতা আজ নেতৃত্ব দিয়েছেন মিছিলে, আগামী দিনে অভিষেক দেবেন। এর মধ্যেই প্রদেশ কংগ্রেসের অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, "খোকাবাবু মানছেন না। দেখছেন না, মিটিং-মিছিলে নেই! মানে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। সবাই কি মানবেন যে তাঁদের ঘরের মা-বোনেদের উপর অত্যাচার হচ্ছে! রাজনীতি করলেও, আমরা তো মানুষ!"