কলকাতা: জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে আক্রমণ করে চলেছেন তৃণমূলের একের পর এক সাংসদ-বিধায়ক। দেবু টুডুর পর এবার আক্রমণে তাপস চট্টোপাধ্য়ায় এবং পার্থ ভৌমিক। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের নেপথ্যে সিপিএম রয়েছে বলে অভিযোগ শাসক নেতাদের। সিপিএম-কে 'কাল কেউটের জাত' বলে আক্রমণ ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থর। অন্য দিকে, তাপসের দাবি, বিজেপি-র মদতে সিপিএম এবং নকশালরা আন্দোলন করছে। (RG Kar Protests)
বারাসাতের সভা থেকে পার্থর মন্তব্য ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, "সিপিএম এখন চোখের জল ফেলছে। 'আহা আমার বোনটার কী হল'! আমি মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টিকে বলছি...এই অঞ্চসে এখনও অনেক মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির হার্মাদরা এখানে থাকেন। এখন হয়ত ভাল ব্যবহার করেন। উপায় নেই বলে। কিন্তু সময় এলে আসল চেহারা বেরিয়ে পড়বে। এরা কাল কেউটের জাত। সময় এলে এদের সেই চেহারা আবার দেখতে পারবেন।" (Kolkata News)
পার্থ আরও বলেন, "আজ যেমন চোখের জল ফেলছি আমরা, আমার নির্যাতিতা বোনের পাশে আছি, একই ভাবে চোখের জল ফেলেছিলাম যখন দেওয়ানকে ধর্ষণ করে খুন করেছিল সিপিএম-এর গুন্ডারা। সেই সময় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, 'এমন ঘটনা তো ঘটেই থাকে!' নার্স বর্ণালী দত্তকে যেদিন খুন করা হয়, আমরা চোখের জল ফেলেছিলাম। যেদিন আমার বোন তাপসী মালিককে ধর্ষণ করে সিপিএম-এর হার্মাদ দেবু দত্ত, সুহৃদ মালিক খুন করেছিলেন, সেদিনও আমরা চোখের জল ফেলেছিলাম। নন্দীগ্রামের ৭০ বছর বয়সের মহিলা চিৎকার করে বলেছিলেন, 'আমি তোমার মায়ের মতো, তুমি আমার ছেলের মতো। আমাকে ধর্ষণ কোরো না'।"
তৃণমূলের তাপসও একই সুরে সিপিএম-কে আক্রমণ করেছেন। তাঁর কথায়, "বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে। এখন আর ডাক্তারদের আন্দোলন নেই এটা। সিপিএম, নকশালদের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে, বিজেপি-র মদতও রয়েছে। রাম-বাম আর শ্যাম। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় কোন দাবি মানেননি বলুন! সুপ্রিম কোর্ট যা রায় দেওয়ার দেবে, কী করা উচিত, আর কী করা উচিত নয়। ঝান্ডা হাতে আন্দোলন করুন। আমরাও ঝান্ডা হাতে লড়াইয়ে নামব।"
এর পাল্টা সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "তৃণমূলের নেতারা মানুষের আন্দোলন, ডাক্তারদের আন্দোলন, ন্যায় বিচারের আন্দোলন নিয়ে রোজ যেভাবে বক্তৃতা করছেন, তাতে বোঝা যাচ্ছে ওঁরা ভয় পাচ্ছেন। ইস্যুগুলি সামনে চলে আসছে। সেই কারমে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। বামপন্থীদের উপর ওঁদের রাগ আছে। সেটা দেখছি শুভেন্দু অধিকারীদেরও আছে। তৃণমূল এবং বিজেপি বামেদের পছন্দ করবে কেন? লাল ঝান্ডা যাতে কোথায় দেখা না যায়, তা মমতা এবং শুভেন্দুর জয়েন্ট প্রজেক্ট। লাভ হয়নি। বুঝে গিয়েছেন বলেই নানা কথা বলছেন। কিন্তু এসব বলে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে গেলেন ওঁরা? আন্দোলন নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও কথা না বলতে নির্দেশ তো মমতা দিয়েছিলেন। প্রমাণ করে দিচ্ছেন যে, মমতার কথা ওরা কেউ মানেন না।" মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন, সেখানে তৃণমূলের নেতারা এমন মন্তব্য করছেন কী করে, প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "দীর্ঘদিন যাবৎ পশ্চিমবঙ্গের মানুষ একাট ভয়ের আবহে ছিল। নিরুপায়, নিশ্চলতার মধ্যে চলে গিয়েছিল সমাজ। তৃণমূলের ধারাবাহিক দুর্নীতি, প্রাতিষ্ঠানিক লুঠের বিরুদ্ধে পাহাড় থেকে সাগর পর্যন্ত মানুষ উত্তাল হয়েছেন। ২০১১ সালে একটা পরিবর্তন হয়েছিল। মানুষ জানতেন দিঘা গোয়া হবে না, লন্ডন হবে না কলকাতা। কারণ বাধ্যতার সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন। তৃণমূলের বিসর্জন ছাড়া অন্য পথ খোলা নেই জানেন মানুষ। এটা ঠিকই যে এই আন্দোলনে কিছু অপ্রাসঙ্গিক শক্তি লুকিয়ে প্রাসঙ্গিক হওয়ার চেষ্টা করছেন। ২০০১ এবং ২০০৩ সালে এই আর জি করেই দুই ডাক্তারের রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয়। সেটাও রাজনৈতিক হত্যা ছিল, প্রাতিষ্ঠানিক লুঠকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। চালাকির দ্বারা কোনও মহৎ কার্য সফল হয় না, সেটা সিপিএম-সহ সকলের মনে রাখা উচিত।" আন্দোলনে সমর্থন চাইলেও, তাতে রাজনৈতিক রং লাগা উচিত নয় বলে মত শমীকেের। তৃণমূল নেতারা যে মন্তব্য করে চলেছেন, তাতে দল বিসর্জনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।