সমীরণ পাল, দীপক ঘোষ ও বিটন চক্রবর্তী, কলকাতা: দুর্নীতির অভিযোগে নাম জড়িয়েছে দলের হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীদের। সেই আবহে নতুন বনাম পুরনো তৃণমূলের মধ্য়েকার ফারাক বোঝালেন তৃণমূল (TMC) নেতা তথা রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক (Partha Bhowmick)। তিনি যে যুক্তি দিলেন, তা হল, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন তৃণমূলের কথা বলেছিলেন। সেই নিরিখে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রথম বড় দায়িত্ব পেয়েছেন যাঁরা, তাঁদের দিকে কোনও আঙুল ওঠেনি।
মঙ্গলবার এবিপি আনন্দের মুখোমুখি হন পার্থ। দুর্নীতিতে নেতা-মন্ত্রীদের নাম জড়ানো নিয়ে প্রশ্ন করলে এই যুক্তি দেন। তিনি বলেন, "এখনও পর্যন্ত আড়াই বছরে কেউ কোনও অভিযোগ জানাতে পারেনি। যেটা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, আমাদের নেতা বলেছিলেন, নতুন তৃণমূল। একুশের আপনি একটি ঘটনার কথা বলুন, যে ঘটনায় সরকারের দিকে কোনও অভিযোগের আঙুল উঠেছে।"
পার্থ আরও বলেন, "আমাদের দল জিরো টলারেন্সে বিশ্বাস করে। আমাদের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রেস কনফারেন্স করে বলেছেন, আমরা জিরো টলারেন্সে বিশ্বাস করি। এর মধ্যে কেউ যদি অপরাধী হয়, তাহলে আদালতে তাঁর শাস্তি হবে। দল তাঁর পাশে দাঁড়াবে না।"
আরও পড়ুন: Mahua Moitra: আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন আটকানোই কি লক্ষ্য, সাংসদপদ কি খারিজ হবে তাঁর? মুখ খুললেন মহুয়া
পার্থর এই মন্তব্য ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। কারও কারও মতে, সুকৌশলে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে এবং ২০২১-এর পরের মধ্য়ে ফারাক বোঝানোর চেষ্টা করলেন পার্থ। এ নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, "পার্থ ভৌমিক যেন স্পষ্টই বলছেন, মমতা জমানায় দুর্নীতি হয়েছে, অভিষেকের নতুন তৃণমূলে দুর্নীতির কোনও জায়গা নেই। রথীন ঘোষও ২১-এর আগে কী হয়েছে জানা নেই বলেছেন। মানে তার আগে দুর্নীতি হতেই পারে!"
রেশন বণ্টনে দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ও বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারি ঘিরে যখন রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় সুকৌশলে ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে এবং ২০২১-এর পরের মধ্য়ে ফারাক করার চেষ্টা করলেন রাজ্যের আরও এক মন্ত্রী। খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের পর এবার সেচমন্ত্রী পার্থ।
২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত খাদ্য়মন্ত্রী ছিলেন জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিক। ২০২১-এ প্রথম বার মন্ত্রী হন রথীন। তাঁর হাতে খাদ্য় দফতরের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। ওই বছরই প্রথমবার মন্ত্রী হয়ে সেচ দফতরের দায়িত্ব পান পার্থ। সোমবার একই সুর ধরা পড়েছিল রথীনের গলায়। জ্যোতিপ্রিয় জমানার দায় নিতে রাজি হননি রথীনও। তাঁর বক্তব্য ছিল, '২০২১-এর পর কী হয়েছে বলুন, নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে অবশ্যই দেখব। তার আগে কী হয়েছে, তা আমি কী করে জানব?' যদিও দলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ জানান, দলের মধ্যে এমন কোনও বিভাজন নেই। দল একটাই, ভাল কাজের কৃতিত্ব যদি আমাদের হয়, খারাপ কাজ হলে, তা-ও দেখতে হবে। নতুন যাঁরা দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁরা আরও সতর্ক থাকার চেষ্টা করছেন।