উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা : 'তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলা বিবেকস্মপন্ন কোনও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।' অভয়ার পরিবারকে একযোগে তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতার বেলাগাম আক্রমণের এবার উল্টো সুর শোনা গেল হুমায়ুন কবীরের মুখে। অভয়ার বাবা-মাকে আক্রমণ করাকে 'মোটেই সমর্থন করেন না' বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন ভরতপুরের তৃণমূল বিধায়ক। কার্যত কুণাল ঘোষ, মদন মিত্র ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়দের ভিন্ন সুরে কথা বললেন তিনি।


এ প্রসঙ্গে হুমায়ুন বলেন, "আমি এক সন্তানের বাবা। আমারও মেয়ে আছে। কাজেই, সেই সন্তানহারা যে বাবা-মা তাঁরা কখনো কখনো তাঁদের স্ট্যান্ড পরিবর্তন করছেন, এনিয়ে আমি কোনও কথা বলতে চাই না। বরঞ্চ সেই বাবা-মায়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা-সহানুভূতি থাকবে।" তৃণমূলের বিভিন্ন নেতার অভয়ার বাবা-মাকে আক্রমণ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, "এসবগুলো মোটেই উচিত নয়। যাঁরা বলছেন তাঁদের উচিত, আমাদের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেকেন্ড ম্যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত।" বাবা-মাকে সরাসরি আক্রমণ করাকে সমর্থন করেন ? উত্তরে তৃণমূল বিধায়ক সরাসরি বলেন, "মোটেই না। কারণ, একজন সন্তানহারা বাবা-মাকে আমরা সান্তনা দেওয়া ছাড়া, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলা বিবেকস্মপন্ন কোনও মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।"


আর জি কর-কাণ্ডে দিনকয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা। মেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী, সঙ্গে সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী। তাঁর মৃত্যুর জন্য রাজ্য সরকারই পুরো দায়ী। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার কোনও যুক্তি নেই, বলে মন্তব্য করেছিলেন আর জি কর মেডিক্যালে নিহত চিকিৎসকের বাবা। তিনি বলেছিলেন, "আমার মেয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কর্মচারী ছিল এবং একজন ছাত্রী ছিল কলেজের। সুতরাং রাজ্য সরকার এই দায় এড়িয়ে আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য, আমি সরাসরি বলছি রাজ্য সরকার পুরো দায়ী। এই অবস্থাতে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতায় থাকার কোনও যুক্তি নেই। ওঁর এই দায় পুরো কাঁধে নিয়ে পদত্যাগ করা এখনই উচিত।"


এই মন্তব্যের পর পরই অভয়ার বাবা-মাকে একে একে নিশানা করেন তৃণমূলের একাধিক নেতা। যার শুরু হয়েছিল কুণালের হাত ধরে। তিনি বলেছিলেন, "কেন মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা আক্রমণ করছেন ? মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ তো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশকে ধরেছে। তাঁরা কিছু অন্ধ তৃণমূল-বিরোধী, বাম-অতি বাম এবং চক্রান্তকারীদের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে তাঁরা সমানে তাঁদের অবস্থান বদলাচ্ছেন। আমাদের বিস্ময় লাগছে, যে বাবা-মার বুক ভেঙে গেছে, মেয়ের মৃত্যু...  সেই দিন থেকে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে রোজ স্নায়ু ধরে রেখে এক একদিন এক একরকম স্টেটমেন্ট দিয়ে যাওয়া, কী করে হতে পারে ?"