কলকাতা: প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ। ভবানীপুরের বাড়ির সামনে সকাল থেকেই তাই ভিড় উপচে পড়ছিল। তল্লাশি চলাকালীন তাঁকে কোথাও দেখা না গেলেও, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা বেরিয়ে যাওয়ার পরই চেনা ভঙ্গিতে ধরা দিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র (Madan Mitra)। জানালেন, তাঁর বাড়ি থেকে কিছু পায়নি CBI. কিছু যে মেলেনি, তদন্তে সহযোগিতা পেয়েছেন, তা লিখেও দিয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। (CBI Raids)


পৌরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করতে রবিবার সকালে মদনের ভবানীপুরের বাড়িতে পৌঁছয় CBI. তার পর প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চবলে তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ। কোন পৌরসভা প্রসঙ্গে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি, তা যদিও CBI খোলসা করেনি বলে জানিয়েছেন মদন। তাঁর দাবি, জানতে চাইলেও, কিছু বলেননি গোয়েন্দারা। শুধু জানান, ওই মামলাতেই তদন্ত চলছে।


এদিন বিকেলে বাড়ির বাইরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন মদন। সেখানে তিনি বলেন, "ওঁরা এসেছেন, যা জানেত চেয়েছেন, জানিয়েছি। যা তথ্য চেয়েছেন, দিয়েছি। এখন শুনছি দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতেও গিয়েছেন। কিন্তু পৌরসভায় যখন চাকরি হয়েছে, আমি বিধায়ক ছিলাম না। হেফাজতে ছিলাম। সেখান থেকে নজরদারি চালাব কী করে? বিধায়ক নই, জেলে বন্দি,তার পরেও এত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারলে গণতন্ত্রের উপর আমার নিজেরই আর আস্থা থাকবে না।"


আরও পড়ুন: Firhad Hakim: ফিরহাদ হাকিমের বাড়িতে সিবিআই, কী কারণে মেয়রের বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা?


পৌরসভায় নিয়োগের ক্ষেত্রেও আবেদনপত্র, অ্যাডমিট কার্ড পাওয়া গিয়েছে বলে ইতিমধ্যেই একাধিক বার সামনে এসেছে। কিন্তু এ নিয়ে মদনের যুক্তি, "দফতরে বিধায়ক থাকুন বা না থাকুন, পিওন বা দারোয়ান থাকেন একজন। লোকজন এসে জানান, এমবিবিএস, টেট দিয়ে এসেছেন। একটা চাকরি করে দিতে হবে। সিবিআই-এর মতো আমরা ধাক্কা দিয়ে কাউকে বের করে দিতে পারি না। ভিক্ষুক এলেও চাল-ডাল দিয়ে করি। শিশুদের হাতে চকোলেট দিই। চাকরির আবেদন নিয়ে এলে ডান্ডা মেরে বের করে দিতে পারি না। বিধায়ক না থাকলেও, অনুরোধ জমা নেওয়া হয়। এমন হাজার হাজার অনুরোধ জমা পড়ে থাকতে পারে। অ্যাডমিট কার্ড-ও জমা দিয়ে যান অনেকে। কিন্তু হাজার হাজার অনুরোধ জমা পড়লেও, অ্যাডমিট কার্ড পাওয়া গেলেও, তার ভিত্তিতে চাকরি হয়েছে কিনা, তা দেখতে হবে। প্রমাণ দিতে হবে আগে।"


মদন আরও বলেন, "ধরুন ১০০০ অ্যাডমিট কার্ড পাওয়া গেল। কিন্তু তাঁর মধ্যে একজনও চাকরি পেয়েছেন কিনা দেখতে হবে। যদি কেউ পেয়ে থাকেন, তাহলে তিনি কোনও টাকা দিয়েছিলেন কিনা, কারও সুপারিশ গিয়েছিল কিনা, পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন কিনা, তদন্ত করে বের করতে হবে। অনেকেই বলেছিলেন, 'পরীক্ষা দিচ্ছি, দেখবেন প্লিজ'। আমিও বলেছিলাম, জগন্নাথের যেমন হাত নেই, আমারও নেই। অভিযোগ করতেই পারেন। কিন্তু সিবিআইউ আজ লিখে দিয়ে গিয়েছে, কোনও কিছু বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছেন। আমি এখানে ছিলাম। দক্ষিণেশ্বরের বাড়িতে নেই। কিন্তু কথায় আছে মূর্তি ছাড়া রথের দাম নেই। এখানে আমি নিজে ছিলাম।"


নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে অয়ন শীলের গ্রেফতারিতেই পৌরসভায় নিয়োগে দুর্নীতির বিষয়টি সামনে আসে। তার পর কামারহাটি পৌরসভার চেয়ারম্যানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু মদনের দাবি, রামকৃষ্ণ পরমহংসের বন্ধুর নাম ছিসল মতি শীল। এই যুক্তিতে চললে, তাঁর বাড়িতেও হানা দিতে হয়। মদন সাফ বলেন, "আমার সঙ্গে এসব কারবার ছিল না। আমি মদন মিত্রক। বুকের পাটা ফুলিয়ে বলছি, ছেলেমেয়েদের চাকরির জন্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়াই করব। তাতে যদি এক ইঞ্চি দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেন, ধরার প্রয়োজন পড়বে না। গলায় দড়ি দিয়ে নিজে গঙ্গায় লাফ দেব। আমি পরোয়া করি না।" কিন্তু কেন তাঁর বাড়িতে CBI গেল? তার জবাবে বলেন, "সিবিআই আমাকে ভালবাসে। বুঝতে পারছি, মোদিজি যাচ্ছেন, I.N.D.I.A আসছে।"