কলকাতা: রাজনীতিতে বটেই, নিজের দলেই আগের মতো গুরুত্ব রয়েছে কিনা, সেই নিয়ে জল্পনা উস্কে দিয়েছিলেন নিজেই। জানিয়েছিলেন, দল তাঁকে গুরুত্ব না দিলেও পরোয়া নেই। টলিপাড়া থেকে সিনেমায় নামার প্রস্তাব রয়েছে তাঁর কাছে (Tollywood)। পরিস্থিতি বেগতিক দেখলে রাজনীতি ছেড়ে অভিনয়ে চলে যাবেন। তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে তাঁর বর্তমান সমীকরণ ঠিক কী, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিস্তর। সেই আবহেই পুরোদস্তুর অভিনেতা হতে নেমে পড়লেন কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র (Madan Mitra)। ছবির শ্যুটিংও শুরু করে দিলেন।
রাজনীতির ময়দান থেকে অভিনয় জগতে পা রাখলেন মদন মিত্র
খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Madan Mitra) মদনকে 'রঙিন ছেলে' বলে উল্লেখ করেছেন। তাকে যথার্থ করে ইতিমধ্যে মিউজিক ভিডিও বার করে ফেলেছেন মদন। গানও গেয়েছেন। মুম্বই থেকে অভিনেত্রীদের নিয়ে এসেছেন কলকাতায়। তাঁদের সঙ্গে করে কলকাতার রাস্তায় হেঁটেছেন। তবে এ সব চালিয়ে গেলেও, এখনও পর্যন্ত রাজনীতিই পেশা ছিল মদনের। এ বার পেশাদার অভিনেতা হিসেবে সিনেমার (Madan Mitra in Cinema) শ্যুটিংয়ে যোগ দিলেন তিনি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে শুরু হল মদনের ছবির শ্যুটিং। আগামী সাত দিন ধরে শ্যুটিং চলবে তাঁর ছবির। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ছবিতে মদন এক চালকলের মালিকের ভূমিকায় অভিনয় করছেন মদন, যাঁর চালকলগুলি আবার রয়েছে বীরভূমে। মদনের এই চরিত্রের সঙ্গে রাজনীতিতে তাঁর সতীর্থ অনুব্রত মণ্ডলের ছায়া দেখতে পাচ্ছেন অনেকে, গরুপাচার মামলায় যিনি গ্রেফতার হয়েছেন, বীরভূমে যাঁরা একাধিক চালকলের হদিশ পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
তাহলে কি অনুব্রতর ধাঁচে গড়া চরিত্রেই অভিনয় করছেন মদন? রাখঢাক করেননি কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক। বরং বললেন, "কেউ বিব্রত হবেন না। চালকলগুলি বীরভূমে। সন্দেহ নেই, বীরভূমে দু'জনের ছায়া আছে। একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অন্য জন অনুব্রত মণ্ডল।"
ছবির শ্যুটিংয়ে গিয়ে অভিনেতার মেজাজেই দেখা গেল মদনকে। কখনও মেকআপ চলছে তাঁর। পরিচালকের নির্দেশ মতো কায়দা করে হেঁটে আসছেন কখনও। কানে ফোন ধরে নানা রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ করছেন। 'এখনও বন্দুকটা বের করিনি', এমন সদ্য গরম নামানো সংলাপও আওড়াতে শোনা গেল নেতা তথা অভিনেতা মদনকে।
নেতা থেকে অভিনেতা হওয়ার এই যাত্রাপথ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাইলে মদন বলেন, "বয়স হয়ে যাচ্ছে তো! লাস্ট ইনিংস খেলছি। এই বয়সে কি আর আগের মতো ভোট চাইতে পারব? তার চেয়ে 'চোখ তুলে দেখ না কে এসেছে, নতুন করে আবার বিয়ের সানাই বেজেছে'...এটা অনেক ভাল"।
তবে প্রথম ছবি বলে কোনও এলেবেলে পরিচালকের হাতে পড়েননি মদন। স্বয়ং হরনাথ চক্রবর্তীর পরিচালনায় অভিনয় করছেন। মদনকে কেন ওই চরিত্রে ভাবলেন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হরনাথ বলেন, "এখানে মদনদা হচ্ছেন পরোপকারী চালকলের মালিক। যিনি বন্দুক দিয়ে ফায়ার করেন। তবে সবাই ওঁকে শ্রদ্ধা করেন। মদনদা ভাল অভিনয় করেছেন। ওঁকে ভেবেই চরিত্রটি লেখা হয়।"
ছবিতে খরাজ মুখোপাধ্যায়, লাবণী সরকারদের সঙ্গে এক ফ্রেমে জায়গা দেখা যাবে মদনকে। প্রেমের গল্প। মেয়ের রাশভারী বাবার চরিত্রে রয়েছেন মদন। তাঁর মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করছেন রাজনন্দিনী দত্ত। মদনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি বলেন, "স্যর এসেছেন। সবাই সেলফি নিচ্ছেন। ভাল লাগছে। দারুণ অভিজ্ঞতা।"
বাংলায় রাজনীতি এবং বিনোদনের মধ্যে সেতুবন্ধন ঘটেছে ঢের আগেই। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলেও, আগে সক্রিয় রাজনীতি মোটামুটি এড়িয়ে চলতেন শিল্পীরা। কিন্তু বর্তমানে দেব, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান, সায়নী ঘোষ, সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তী, জুন মালিয়া, নেতা-অভিনেতার তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হয়ে চলেছে। তবে এঁরা প্রত্যেকেই অভিনয় থেকে রাজনীতিতে পা রেখেছেন। উলটপুরাণ হল মদনের ক্ষেত্রে। তিনি রাজনীতি থেকে অভিনয়ে এলেন। তা নিয়ে তিনি বলেন, "আমরাই তো সবচেয়ে বড় অভিনেতা। যাঁর রাজনীতি করি, আমাদের গোটাটাই তো লাইভ! এত টেক-অ্যাকশনও নেই।"
পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তীর পরিচালনায় অভিনয় করছেন মদন মিত্র
রাজনীতিতে রয়েছেন বটে। কিন্তু মদনের আগের সেই দাপট নাকি নেই! নিন্দুকেরা বলেন, সারদা কাণ্ডে জেলে যাওয়ার পর থেকেই বদল ঘটেছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন মিত্রের রাজনৈতিক জীবনে। আজও তৃণমূলের বিধায়ক বটে তিনি, কিন্তু তা নামসর্বস্ব বলেই দাবি করেন অনেকে। তাতেই মদন টলিপাড়ার দিকে ঝুঁকছেন বলে মনে করছেন অনেকে। তা নিয়ে রাখঢাক নেই মদনেরও। তাঁর বক্তব্য, "প্যারালাল লাইন খুলে রাখাই ভাল।"