কলকাতা: নারদকাণ্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তৃণমূল (TMC) সাংসদের বার্তা ছিল, তাঁকে এবং দলের সকলকে গ্রেফতার করা হোক, কিন্তু শুরুটা হোক শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari) দিয়ে, টিভিতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল যাঁকে। অভিষেকের সেই মন্তব্য নিয়েই এবার টানাপোড়েন শুরু হল তৃণমূলে। অভিষেকের কথাতই সব হবে না বলে বিতর্ক উস্কে দিয়েছিলেন দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় (Saugata Roy)। এবার সৌগতকে একহাত নিলেন কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র (Madan Mitra)।
শনিবার সংবাদমাধ্যমে সৌগতর উদ্দেশে কটাক্ষ ছুড়ে দেন মদন। বলেন, "আমাদের কিছু নেতা ভুলে যান, মমতা-অভিষেকের দেওয়া প্রতীকেই তাঁরা জিতেছেন। যত বড় নেতাই হোন না কেন, কাল প্রতীক কেড়ে নিলে, চোখে চশমা পরে আবার ছাত্র পড়াতে হবে, আইনস্টাইন কী বলেছিলেন, আর্কিমিডিস কী বলেছিলেন...ছাত্রও জুটবে না, তখন বেচতে হবে বাদাম। এই ধরনের মন্তব্যের অর্থ দলকে অপমান করা, অপদস্থ করা। এটা দলবিরোধী মন্তব্য। হিম্মত থাকলে বলে দিন, 'অভিষেক বললেই লড়ব নাকি? দলের প্রতীক ছাড়া লড়ব।' দেখুন বাজারে গুড় বিক্রি করতে হবে।"
এদিন অভিষেকের হয়েই সুর চড়ান মদন। বলেন, "অভিষেক বলেছে, আগে শুভেন্দুকে ধরো, তার পর আমাদের। অর্থাৎ যতই আমাদের হেনস্থা করো না কেন, শুভেন্দুকেও ধরা পড়তে হবে। আমাদের আর নতুন করে তেলে পোড়ানোর দরকার নেই। খ্যামটা নাচ আগেই হয়ে গিয়েছে। সৌগত রায়, কাকলি ঘোষ দস্তিতারদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আসেনি, কারণ সাংসদ ছিলেন ওঁরা। কমিটিও হয়েছিল সেই নিয়ে। সেখান থেকেও অনুমতি মেলেনি। হ্যাঁ, অভিষেক যদি বলত সকলের জামিন বাতিল করা হোক, তাহলে বোঝা যেত অন্য কিছু বলতে চাইছে। ও অনেক বড় খেলা খেলেছে।"
সম্প্রতি নিয়োগের একটি মামলায় অভিষেককে আবারও তলব করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। সেখান থেকে বেরিয়ে নারদকাণ্ডে নতুন করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সক্রিয়তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে, তিনি জানান, গোয়েন্দারা সকলকে গ্রেফতার করুন, তাঁর দলের সকলকে গ্রেফতার করুন, কিন্তু শুরুটা হোক শুভেন্দুকে দিয়ে। সেই নিয়ে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে সৌগত বলেন, " অভিষেক বললেই তো আর ধরবে না! পাঁচ বছর আগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। তার পর আর এগোয়নি। আমি কী করব? অভিষেক যা ঠিক মনে করেছে, বলেছে। জিজ্ঞাসাবাদে আপত্তিজনক কিছু পেলে তবেই গ্রেফতার করবে। যেই বলুক না কেন, তাতে তো আর গ্রেফতার করে না সঙ্গে সঙ্গে!" সৌগতর এই মন্তব্যে বিতর্ক শুরু হতে সময় লাগেনি। আর সেই নিয়েই পাল্টা তাঁকে বিঁধেছেন মদন।
অভিষেকের একটি মন্তব্য ঘিরে প্রকাশ্যে এই টানাপোড়েন নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন বিরোধীরা। রাজ্যে বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "রাজতন্ত্রের যখন অবসান হয়, রাজার অনুগামী, রাজকর্মচারীদের মধ্যে শুরু হয় সংঘাত। উগ্র বাক্য বিনিময় থেকে খুন পর্যন্ত হয়। তৃণমূলে সৌগত কখন যে দলের সমালোচনা করেন, কখন আবার দলের হয়ে কথা বলেন, এসব দুর্বোধ্য বিষয় নিয়ে ক্লান্ত বাংলার মানুষ। আর মদন মিত্র রঙিন মানুষ। তিনি রসেবশে থাকেন। রাজনৈতিক ভাবে এখন ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো অবস্থান। আসলে তৃণমূলের শেষের দিন আসতে আর দেরি নেই। তাই পরস্পরকে আক্রমণ করে চলেছেন।"
সিপিএম যদিও তৃণমূল এবং বিজেপিস দুই দলকেই বিঁঝেছে। দলের নেতা শমীক লাহিড়ি বলেন, "শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি-তে গিয়ে গ্রেফতারি এড়িয়েছেন। আর তৃণমূলের অন্য নেতারা বিজেপি-র অন্য নেতাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে রয়েছেন। সারদা, নারদতদন্ত বিশ বাঁও জলে। বোঝা পড়া হয়ে রয়েছে। কেউ বিজেপি-তে যোগদান করে বাঁচছেন, কেউ দলে থেকেই বোঝাপড়া করছেন। এঁদের সবারই জেলে থাকার কথা।"
স্কুল-পুরসভা নিয়োগ থেকে গরু-কয়লা পাচার দুর্নীতি নিয়ে যখন তদন্ত চলছে, সেই আবহেই আচমকাই আবার শিরোনামে উঠে এসেছে, একদা রাজ্য়ে সাড়া ফেলে দেওয়া নারদাকাণ্ড। সম্প্রতি ফের ম্যাথু স্যামুয়েলকে নোটিস পাঠিয়েছে সিবিআই। তার আঁচ এসে পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতেও। শাসক-বিরোধী পরস্পরকে আক্রমণ করে চলেছে। তার মধ্যেই তৃণমূলের অন্দরেও শুরু হয়েছে টানাপোড়েন।