প্রকাশ সিনহা, কলকাতা : নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের পর, এবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করল ইডি। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি হন মানিক ভট্টাচার্য। গতবছর তৃণমূলের তরফে বিধায়কও হন তিনি। সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে মানিককে অপসারণের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। CBI ও ED দু’ই কেন্দ্রীয় এজেন্সিই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
কত টাকার লেনদেন?
স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির শিকড় কত গভীরে? দুর্নীতির পিছনে কত টাকার লেনদেন? তারই খোঁজে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে বারবার তলব করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। গত ২৭ জুলাই
প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতিকে ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে ইডি। যাদবপুরে তাঁর দু’টি ফ্ল্যাটে তল্লাশিও চলে। ইডি সূত্রের খবর, মানিকের বাড়িতে উদ্ধার হওয়া সিডি-তে পাওয়া যায় ২৬৯ জন চাকরিপ্রার্থীর নাম ও তথ্য। যাঁদের বেআইনিভাবে বাড়তি ১ নম্বর করে দেওয়া হয়েছিল। কেন ওই সিডি বাড়িতে ছিল, তা নিয়ে মানিক ভট্টাচার্যকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি।
নিয়োগ দুর্নীতিতে মানিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী কী
নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ-অর্পিতা-সহ ৮ জনের বিরুদ্ধে দেওয়া ED’র চার্জশিটে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জড়িত থাকার প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করতে গিয়েও মানিক ভট্টাচার্যের যোগসূত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নিয়োগকাণ্ডে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর জড়িত থাকার প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে মানিক ভট্টাচার্যের যোগসূত্রের কথা উল্লেখ করেছে ইডি। বলা হয়েছে, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি মানিক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে বেসরকারি কলেজ থেকে টাকা তোলা,হুমকি দেওয়া, ইন্টারভিউয়ে প্রাপ্ত নম্বরের উল্লেখ ছাড়া নদিয়ার টেটের মাস্টার শিট চেয়ে চেয়ারম্যানকে চাপ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ তুলে মেসেজ করেন। মানিকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার বদলে তাঁকেই অভিযোগ সম্বলিত মেসেজটি ফরোয়ার্ড করে দেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। মানিক-যোগ সম্পর্কে এমনই উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে মানিক ভট্টাচার্যকে ইতিমধ্যেই কয়েকদফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
সিবিআই স্ক্যানারেও মানিক
এর পাশাপাশি সিবিআই স্ক্যানারেও ছিলেন মনিক। পুজোর মুখে মানিক ভট্টাচার্যকে সাময়িক স্বস্তি দেয় শীর্ষ আদালত। বাড়ানো হয় রক্ষাকবচের মেয়াদ। ১০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতির রক্ষাকবচের মেয়াদ বাড়ায় সুপ্রিম কোর্ট। অর্থাৎ দেশের সর্বোচ্চ আদালতে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত মানিককে গ্রেফতার করতে পারত না CBI।
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতির পদ থেকে মানিক ভট্টাচার্যকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়ার পর ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা খান পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন তৃণমূল বিধায়ক ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য।
এসএসসি মামলায় CBI’এর চার্জশিটে বলা হয়, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অন্যতম ‘মাস্টারমাইন্ড’ পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টে মানিক ভট্টাচার্যকে দুর্নীতিকাণ্ডের ‘কিংপিন’ আখ্যা দেয় CBI । শুনানি চলাকালীন বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ, CBI-এর কাছে জানতে চায়, কতদিন ধরে এই তদন্ত চলবে? আমরা চাই না, বছরের পর বছর ধরে তদন্ত চলতেই থাকুক। CBI-এর আইনজীবী বলেন, তদন্ত কবে শেষ হবে, সেই CBI কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তবে CBI ইতিমধ্যেই অনেক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। কারা তদন্ত করবে, সেটা বলার অধিকার নেই অভিযুক্তের। তদন্ত চলছে। যাঁরা চাকরি পিছু সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা দিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে খুঁজে বের করতে হবে।
এরপরই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, আপাতত এই মামলার রায়দান স্থগিত রাখা হল। রায় দেওয়া অবধি মানিক ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করতে পারবে না সিবিআই। তবে তাঁকেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে।