ডায়মন্ড হারবার: আসন সমঝোতা নিয়ে দরাদরির জেরে বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।  জাতীয় স্তরে I.N.D.I.A জোটের শরিক হলেও, বাংলায় তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্য়ে বনিবনা না হওয়ার জন্য সরাসরি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরীকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন দলের সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন। এবার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের গলাতেও একই সুর শোনা গেল। বিজেপি-প বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল মমতাকে আক্রমণ করে অধীর বিজেপি-কে সুবিধা করে দিচ্ছেন বলে দাবি করলেন তিনি। (Abhishek Banerjee)


সোমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন অভিষেক। রাজ্য়ে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে প্রশ্ন করলে সরাসরি অধীরের দিকে আঙুল তোলেন তিনি। বলেন, "গত সাত মাসে , দেখুন কংগ্রেস কতবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে, আর কত বার বিজেপি-কে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব বলছেন, বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করুন। রাষ্ট্রপতি শাসন মানে কেন্দ্রের কর্তৃত্ব। কেন্দ্রের হাতে সব চলে গেলে কার লাভ? বিজেপি-র লাভ। তাহলে কার হাত শক্ত করছেন?  প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি যখন বিজেপি-র লাভের কথা বলছেন, বিজেপি-র ট্রোজা়ন হর্স তাহলে কে?" (Adhir Ranjan Chowdhury)


অভিষেক আরও বলেন, "আসন সমনঝোতা হয়নি, কার জন্য হয়নি, মানুষ দেখুন। আমরা চেয়েছিলাম আসন সমঝোতা নিয়ে কথা হোক। একদিনই সমন্বয় কমিটির বৈঠক হয়। সেই দিনই ইডি ডেকে পাঠানোয়, ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সেখানে যেতে পারিনি আমি। জোট কয়টি আসন পাবে, কে, কোথায় জিতবেন, কেউ বলতে পারবেন না, মানুষ বলতে পারবেন। মানুষের উপরই ছেড়ে দেওয়া হোক। মানুষ কোথায় কাকে জেতাবেন, তাঁদের উপরই ছেড়ে দেওয়া হোক।"


আরও পড়ুন: Primary Recruitment Update: বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে মান্যতা শীর্ষ আদালতের, জট কাটল ২০২২-এর প্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়ায়


অভিষেকের কথায়, একদিকে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব বলছেন, মমতাকে ছাড়া জোট ভাবাই যায় না। আবার আলোচনাতেও আসতে রাজি হচ্ছেন না। কংগ্রেসের প্রদেশ নেতৃত্ব বলছেন, ইডি-সিবিআই বাল কাজ করছে। দিল্লিতে নয়, বাংলায় ভাল কাজ করছে। বলছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি সরকার চালাতে পারছেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপি-র বি টিম বলছেন। কিন্তু যিনি বিজেপি-র বিরুদ্ধে জোটে লড়ছেন, তাঁকে আক্রমণ করে কে বিজেপি-কে সুযোগ করে দিচ্ছে, মানুষ বুঝছেন।" সাংবাদিক বৈঠক করে মমতাকে আক্রমণ করলেও, বাংলার প্রতি বঞ্চনা নিয়ে অধীর কত বার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, কত বার বাংলার মানুষের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে বলেছেন, প্রশ্ন তুলেছেন অভিষেক।


আসন সমঝোতায় কংগ্রেসের গড়িমসির জন্যই মমতা একা লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান অভিষেক। তিনি জানান, একাধিক বার জোটের বৈঠক হয়েছে। দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে। শেষ বার দিল্লিতে যখন বৈঠক হয়, সেখানেই মমতা জানিয়ে দেন, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আসন সমঝোতা সেরে ফেলতে হবে। কে, কোথায় লড়বেন, স্পষ্ট জানাতে বলা হয়েছিল। তৃণমূল দ্রুত সব সেরে ফেলার পক্ষপাতী ছিল বরাবরই। বিহারে প্রথম বৈঠকেও জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পর একাধিক বৈঠক হলেও, কিছু হয়নি। আলোচনাতেই অংশ নেয়নি কংগ্রেস। তাই কেউ না চাইলে জোর করে এগনো যায় না বলে দাবি অভিষেকের।   


যে কেউ নন, কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি অভিষেক, যিনি লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতাও, সেই অধীর যদি জোটসঙ্গী মমতাকে নিজের বিরুদ্ধে লড়তে চ্যালেঞ্জ জানান, তাতে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙাই স্বাভাবিক বলে জানান অভিষেক। তবে বাংলায় একা লড়াইয়ের ঘোষণা হলেও, জাতীয় স্তরে তৃণমূল I.N.D.I.A জোটের পাশেই রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অভিষেক জানান, আসন সমঝোতা না হলেও, I.N.D.I.A  জোটের পাশেই রয়েছে তৃণমূল। আর কোন দল থাকবে, কে থাকবে না, তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই তাঁদের।