আমতলা: ধর্ষণের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে ফের সওয়াল করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা দেশে ধর্ষণবিরোধী আইন চালুর দাবি তুললেন তিনি। অভিষেক জানালেন, রাজ্য সরকার 'অপরাজিতা বিল' আনলেও, এখনও তা রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে পড়ে রয়েছে। প্রয়োজনে লোকসভায় তিনি প্রাইভেট মেম্বার্স বিল আনবেন। লাগাতার ধর্ষণের ঘটনা যেভাবে বেড়ে চলেছে, তা নিয়ে কেন্দ্রের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ করলেন তিনি। আর জি কর কাণ্ডের পর চিকিৎসকদের নিয় অভিষেকের এই সম্মেলন এবং ধর্ষণ বিরোধী আইনের পক্ষে তাঁর এই সওয়াল রাজনৈতিক ভাবেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। 

Continues below advertisement

শনিবার আমতলায় ডক্টর্স কনভেনশনে বক্তৃতা করেন অভিষেক। আগামী দিনে রাজ্যের সর্বত্র চিকিৎসকদের নিয়ে শিবির করবেন বলেও জানান। আর সেখানেই ধর্ষণমুক্ত সমাজের লক্ষ্যে এগনোর কথা বলেন তিনি। এদিন অভিষেক বলেন, "আর জি করের ঘটনার  প্রথম দিন থেকে নিন্দা করে আসছি আমি।  বার বার বলেছি, যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটায়, সমাজে বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই তাদের। আজও একই কথা বলছি। লুকিয়ে চুরিয়ে কাজ করি না আমি, সামনাসামনি কথা বলি। কারও ভাল বা খারাপ লাগতেই পারে। এই ধর্ষণ ব্যাধির একমাত্র সমাধান হল আইন। বাংলায় তো প্রতিবাদ হয়েছে দু'-তিন মাস। গোটা দেশে প্রতিবাদ হয়েছে। কিন্তু তার পরও আমাদের দেশে প্রতি ১০ মিনিটে একটি করে ধর্ষণ হচ্ছে,ঘণ্টায় ছ'টা।"

ধর্ষণবিরোধী আইন নিয়ে অভিষেক বলেন, "আমি বলেছিলাম প্রাইভেট মেম্বার্স বিল আনব। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই বিধানসভায় অপরাজিতা বিল পাস করেছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুযায়ীকিন্তু, ওই বিল রাষ্ট্রপতি সই করে ছাড়লে গোটা দেশের জন্য আইন কার্যকর হবে। আলাদা করে কিছু লাগবে না। আর তা যদি না হয়, আমি প্রাইভেট বিল আনব। সে কেউ আমার পাশে থাকুন বা না থাকুন।"

Continues below advertisement

কঠোর আইন ছাড়া ধর্ষণ রোখা সম্ভব নয় বলে এদিন মন্তব্য করেন অভিষেক। তাঁর কথায়, "করোনার সময় স্যানিটাইজার, মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও কোভিড এড়ানো যায়নি। কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন টিকা দিয়ে মোকাবিলা করতে হয়েছে। ধর্ষণের মতো সামাজিক অপরাধকে চিরতরে মুছতে হলে, একমাত্র সমাধান ধর্ষণবিরোধী আইন। সরকার চাইলে পারে না, তা নয়। রাজ্য পাস করে রাজ্যপালকে পাঠিয়েছে। তিনি পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতিকে। দু'মাস ধরে পড়ে রয়েছে, কোনও উচ্চবাচ্য নেই। বিলটি এমন ভাবেে করা হয়েছে, যাতে ৫০ দিনে শাস্তি হয় ধর্ষণের ক্ষেত্রে। অ্যাসিড হামলার ক্ষেত্রে তিন থেকে পাঁচ বছরের সাজার বিধান রয়েছে। অন্য কোনও রাজ্যে হয়নি। এই বিল যেদিন পাস হবে, ধর্ষণ বন্ধ হবে।"

ধর্ষণ রোখায় কেন্দ্রের সদিচ্ছা নিয়েও এদিন প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। বলেন, "কেন্দ্র যদি চায়, একদিন লাগবে। অর্ডিন্যান্স আনতে পারে। জি-২০ সম্মেলনের সময় অর্ডিন্যান্স এনে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা কেড়ে নিল। সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে গিয়ে, আদালত অবমাননা করে তিন-তিন বার ED-র ডিরেক্টরের মেয়াদ বাড়িয়েছে। তাহলে অর্ডিন্যান্স করে ধর্ষণবিরোধী আইন আনছেন না কেন?"

এ প্রসঙ্গে গুজরাতে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের ছাড়া পেয়ে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেন অভিষেক। বলেন, "গুজরাতে ১০ বছর পর সব ছাড়া পেয়ে গিয়েছে। আমার কথা খারাপ লাগতেই পারে। কিন্তু আমি বলছি, পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ যখন একজনের বিরুদ্ধে, সেই লোককে জেলে বসিয়ে তিন বেলা খাওয়াব কেন? কেন মৃত্যুদণ্ড হবে না? পাঁচ বছর ধরে জেলে রাখব, দায়রা আদালত, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে। তাকে ছ'বছর জেলে রেখে দিনে দু'বার চা, দু'বেলা খাওয়ানোর খরচও অন্তত ৩০০ টাকা। মাসে ৯ হাজার, বছরে কয়েক লক্ষ। সেই টাকায় গরিব মানুষের বাড়ি হয়ে যাবে। ওর পিছনে কেন খরচ করব? ওদের বেঁচে থাকার কোনও অধিকার নেই।" 

অভিষেক এদিন জানান, এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। যে দলেরই হোক না কেন, দোষীকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যেতে হবে। মহারাষ্ট্রে স্কুলের ছোট শিশুদের পর্যন্ত লালসার শিকার হতে হয় যেখানে, সেই দানবদের সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে বলে মনে করেন না তিনি। ধর্ষণবিরোধী আইনের জন্য বৃহত্তর আন্দোলনেরও ডাক দিয়েছেন অভিষেক। চিকিৎসক সমাজের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, কত মানুষ পরিবারের সম্মান, লোক জানাজানির ভয়ে ধর্ষণের অভিযোগই দায়ের করেন না। তাই বাস্তবে পরিসংখ্যান আরও বেশি হতে পারে।