কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: দুর্নীতি মামলায় নাম জড়িয়ে চলেছে দলের একের পর এক নেতার। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে সরব হয়েছিলেন তিনি। সেই নিয়ে দলের নেতাদের রোষে পড়ছিলেন তিনি। এ বার তৃণমূলের (TMC) রাজ্যসভা সাংসদ জহর সরকারকে (Jawhar Sircar ) দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বার করে দেওয়া হল বলে দলীয় সূত্রে খবর। তাঁকে পদত্যাগ করতেও বলা হয়েছে বলে খবর। দলীয় নেতৃত্বের সেই মনোভাব জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তাই জহর পদত্যগ করতে পারেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছে।
তৃণমূলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বাদ পড়লেন জহর সরকার
জানা গিয়েছে, জহরের সঙ্গে তাঁর বাড়ির বাইরে সামনাসামনি দেখা করেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। সেখানে দলের মনোভাব জহরকে জানিয়ে দেন তিনি। তার পরই তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় জহরকে। শুধু তাই নয়, জহর পদত্যাগ করুন, দলীয় নেতৃত্বের সেই বার্তাও প্রবীণ সাংসদের কাছে সুখেন্দুশেখর পৌঁছে দেন বলে জানা গিয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে খবর, জহরকে নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রশ্ন ওঠে, রাজ্য সরকারকে অপদস্থ করতে যে সময় একের পর এক কেন্দ্রীয় সংস্থাকে লেলিয়ে দেওয়া হচ্চে, সেই সময়কেই কেন মুখ খোলার জন্য বেছে নিলেন জহর? শুধু তাই নয়, তাঁর মতো প্রবীণ ব্য়ক্তি, দীর্ঘ দিন যিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেছেন, প্রকাশ্যে দলের বিরুদ্ধে মুখ খুললে জনমানসে তার কী প্রভাব পড়তে পারে, মানুষের মনে কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তাঁর কাছ থেকে এমনটা প্রত্যাশিত ছিল না বলেও জানানো হয়।
তৃণমূলের রাজ্যসভার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ১৩ জন সদস্য রয়েছেন। শুক্রবার রাতে গ্রুপ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার পর নয়া গ্রুপ তৈরি করা হলেও, তাতে আর সংযুক্ত করা হয়নি জহরকে। দলের কড়া অবস্থানের পর এবার কী করবেন জহর সরকার? বাড়ছে জল্পনা। তবে এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি তিনি।
আরও পড়ুন: Raju Sahani : ৫ দিনের সিবিআই হেফাজত হালিশহর পুরসভার চেয়ারম্যানের
দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলার পর থেকেই দলের নেতাদের রোষের মুখে পড়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ জহর সরকার। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) ঘনিষ্ঠর বাড়ি থেকে টাকার পাহাড় এবং গয়নার স্তূপ উদ্ধার নিয়ে বিরোধীরা যখন সরব, সেই সময় এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন জহর সরকার। বলেছিলেন, "যখন টিভিতে দেখলাম বিশ্বাসই করতে পারিনি। কারও বাড়ি থেকে এত টাকা বেরোতে পারে! কল্পনার অতীত। এমন দুর্নীতির দৃশ্য টিভিতে কম দেখা যায়। বাড়ির লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে বলল, রাজনীতি ছেড়ে দাও । সাংসদ পদ ছেড়ে দাও। বাড়ির লোক তো বলছে, এখুনি ছেড়ে দাও বাপু! বন্ধুরা টিপ্পনি করল। বলল, এখনও আছিস? কত পেয়েছিস? এমন লাঞ্ছনা জীবনে কোনওদিন শুনতে হয়নি।"
এর পর থেকে, তৃণমূলের নেতারাই, জহরের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানাতে শুরু করেন। সৌগত বলেন, "সাহস থাকলে পদত্যাগ করুন! কমপক্ষে সুবিধা ভোগটা বন্ধ হবে। উনি গেলে কোনও ক্ষতি হবে না। লাভই হবে।" বুধবারও জহর সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূলের আরও দুই নেতা। সুখেন্দুশেখর বলেন, "আমি মনে করি, যারা দায়িত্বশীল ব্যক্তি, তাঁরা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন।" বিধায়ক তাপস বলেন, "ওঁর নির্বাচনী এজেন্ট হিসাবে আমি লজ্জিত। এ সব বলার আগে অন্তত এক বার নেত্রীর সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল জহরবাবুর।"
দুর্নীতির অভিযোগে নেতাদের জড়িয়ে পড়া নিয়ে মুখ খোলেন জহর
তার পরও যদিও মনিজের অবস্থানেই অনড় থেকেছেন জহর। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেন, তৃণমূলের ভাবমূর্তির স্বার্থে তিনি যা ঠিক মনে করেছেন, তাই বলেছেন। তাঁর কাছে ২০২৪-এর যুদ্ধ সবচেয়ে বড়। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি এমনই জানিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। দু'দিন আগে এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও তাঁর মুখে ২০২৪’এর কথা শোনা গিয়েছিল। বলেছিলেন, "তৃণমূলের প্রচুর লোক আছে যারা সৎ... আর ক'টা শ্রেণিকে দেখলে মনে হয় ধান্দাবাজ! ভাবমূর্তি ফিরে পেতে হবে। এদেরকে শরীর থেকে বর্জন না করে, পচা শরীর নিয়ে ২০২৪ সালের লড়াই করা মুশকিল হবে।"