কলকাতা: সংসদে দাঁড়িয়ে আদানিদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার পরই তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের সঙ্গে সেই নিয়ে টানাপোড়েন চলছেই। এবার 'দাগা খাওয়া প্রাক্তন'কেও কাঠগড়ায় তুললেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁর নামে মিথ্যা ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। 


নিশিকান্তের সঙ্গে মহুয়ার টানাপোড়েন নতুন নয়। বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত নির্বাচনী হলফনামায় ভুয়ো ডিগ্রি দেখিয়েছিলেন বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন মহুয়া। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু 'দাগা খাওয়া প্রাক্তন' বলে যাঁকে বিঁধেছেন মহুয়া, সেই নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। 


মহুয়া যদিও সরাসরি কারও নাম উল্লেখ করেননি, তবে ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির দেওয়া ২ কোটি টাকা এবং দামি আইফোন উপহারের বিনিময়ে মহুয়া লোকসভায় আদানিদের নিয়ে প্রশ্ন করেছেন বলে নিশিকান্তের পাশাপাশি, মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন আইনজীবী জয় অনন্ত দেহদরাই (Jai Anant Dehadrai)। পেশায় আইনজীবী তিনি। মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই প্রধানকেও চিঠি  দিয়েছেন তিনি।


Mahua Moitra: ভুয়ো ডিগ্রিধারী সাংসদ, ‘দাগা খাওয়া প্রাক্তন’কে বিঁধলেন মহুয়া, হুঁশিয়ারি আদানিকেও


তাই 'দাগা খাওয়া প্রাক্তন' বলতে মহুয়া অনন্তকেই নিশানা করেছেন বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। অনন্ত আসলে কে, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। এমনিতে পরিচিত মুখ না হলেও, আগেও মহুয়ার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জন্য খবরে উঠে এসেছেন অনন্ত। শোনা যায়, অনন্তের সঙ্গে একসময় সম্পর্ক ছিল মহুয়ার। সম্পর্ক ভেঙে গেলেও, পোষ্যের উপর অধিকার নিয়ে এখনও টানাপোড়েন চলছে তাঁদের মধ্যে। 


গত ছয় মাসে অনন্তের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক বার অভিযোগও জানিয়েছেন মহুয়া। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা যায়, অনন্তের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ভাবে কোথাও ঢুকে পড়া, চুরি, অশ্লীল মেসেজ পাঠানো, অত্যাচারের অভিযোগও আনেন মহুয়া। আইনি নোটিসে অভিযোগ করা হয়, মহুয়া এবং অনন্ত একসময় ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। কিন্তু পরে তা ভেঙে যায়। তার পর থেকে লাগাতার মহুয়াকে অশ্লীল ভাষায়, ক্ষতিসাধনের হুমকিও দেন অনন্ত। বিনা অনুমতিতে মহুয়ার বাসভবনে ঢুকে পড়েন অনন্ত, ব্যক্তিগত সামগ্রী চুরি করেন, এমনকি পোষ্যটিকেও চুরির চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। 


শুধু তাই নয়, মহুয়াকে নিয়ে অনন্ত অপপ্রচার করেন, ফলাও করে মিথ্যে কথা বলে বেড়ান বলেও অভিযোগ করেন তৃণমূল সাংসদের আইনজীবী। সংবাদমাধ্যমকে দিয়েও মহুয়াকে নিয়ে মিথ্যা খবর ছাপানোর চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায়, অনন্ত শেষ মেশ বিজেপি এবং নিশিকান্তের কাছে গিয়ে পৌঁছন বলে দাবি করা হয় নোটিসে। 


সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় মহুয়ার বেশ কিছু ব্যক্তিগত ছবিও ছড়িয়ে পড়ে। এর নেপথ্যে বিজেপি-র হাত রয়েছে বলে গোড়াতেই অভিযোগ তোলেন মহুয়া। এর মধ্যে একাধিক ছবিতে কাঁচি চালিয়ে কেন পাশের মানুষটিকে বাদ দেওয়া হল, প্রশ্ন তোলেন তিনি। সেই সব ছবি অবিকৃত অবস্থায় সামনে এসেছে সম্প্রতি, যাতে মহুয়ার পাশে অনন্তকে দেখা গিয়েছে। তাই ওই সব ছবি বিজেপি-র হাতে যাওয়ার নেপথ্যেও অনন্তের দিকে আঙুল তুলতে শুরু করেছেন মহুয়া-ঘনিষ্ঠেরা। এর পরই নিশিকান্ত এবং অনন্তের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ করেছেন মহুয়া। এতদিন শুধু ক্ষমা চাইতে হবে এবং সব যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে বলেই অনন্তের সামনে দাবি তুলেছিলেন তৃণমূল সাংসদ।