কলকাতা: ব্যক্তিগত জীবনকে ঘিরে কম বিতর্ক হয়নি। আবারও বিতর্কে তৃণমূল সাংসদ, অভিনেত্রী নুসরত জাহান (Nusrat Jahan)। ফ্ল্যাট পাইয়ে দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ উঠল তাঁর বিরুদ্ধে। তবে এই অভিযোগ হালফিলের নয়, নয় নয় করে ১০ বছর আগের। অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও এতদিন পুলিশ তা নিয়ে পদক্ষেপ করেনি বরং একপ্রকার নিষ্ক্রিয়ই থেকেছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ জমা পড়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের কাছে। (Kolkata News)


১০ বছর আগের প্রতারণা মামলায় নাম উঠে এল নুসরতের। জানা গিয়েছে, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এবং বর্তমান কর্মীদের যে সংগঠন রয়েছে, তাদের সঙ্গে সিক্সথ সেন্স ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার নামের একটি সংস্থার চুক্তি হয়। ওই চুক্তির আওতায় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এবং বর্তমান মিলিয়ে মোট ৪২৯ জন কর্মীকে ৫ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা করে দিতে বলা হয়। ঠিক হয়, ইকোপার্কের উল্টো দিকে রাজারহাটে ৫০০ কাঠা জমি কেনা হবে। সেখানে ওই টাকার বিনিময়ে ব্য়াঙ্কের প্রাক্তন এবং বর্তমান কর্মীরা ফ্ল্যাট পাবেন। 


কিন্তু বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, তাঁরা যে অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করেছিলেন, পরে সেই অ্যাকাউন্টের টাকা দিয়ে পাম অ্যাভিনিউয়ে একটি ফ্ল্যাট কেনা হয়। অভিযোগ, সেই ফ্ল্যাটটি কেনেন নুসরতই। শুধু তাই নয়, সিক্সথ সেন্স ইনফ্র্যাস্ট্রাকচার সংস্থার ডিরেক্টরও ছিলেন নুসরত, এমনও দাবি সামনে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ, নুসরত এবং রাকেশ সিংহ নামের এক ব্যক্তি সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। রাকেশ সেই সময় পি-১৬ গড়িয়াহাট ইস্টের যে ঠিকানা দিয়েছিলেন, সেখানে গেলে বাড়ির মালিক জানান সিনেমা প্রযোজনা সংস্থার জন্য কিছুদিনের জন্য বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়। 


আরও পড়ুন: Kunal Ghosh : 'বুদ্ধবাবুর সাদা পোশাকে দাগ নেই', নিজের বইয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন কুণালের! এখন কেন বিপরীত অবস্থান?


বিষয়টি নিয়ে ১০ বছর আগেই গড়িয়াহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। কিন্তু পদক্ষেপ করা দূর, বরং পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকাই পালন করেছে বলে দাবি বিনিয়োগকারীদের।  লিখিত ভাবে অভিযোগ হয় গড়িয়াহাট থানায়। ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুলিশি নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ। বিনিয়োগকারীদের দাবি, যে টাকা তাঁরা দিয়েছিলেন, সেই টাকা অন্যত্র ডাইভার্ট করা হয়। নুসরত, রাকেশ, তাঁর স্ত্রী মহুয়া সিংহ এবং বিনায়ক সিংহ-সহ আপরও কয়েক জন ডিরেক্টর মিলে ওই টাকা হস্তগত করেন। সেই টাকাতেই পরে নুসরত পাম অ্যাভিনিউয়ে ফ্ল্যাট কেনেন বলে অভিযোগ। 


এই ঘটনায় অপরাধমূলক মামলা দায়ের করেন বিনিয়োগকারীরা। সার্টিফায়েড ডিড ও সংগ্রহ করে আদালতে জমা দেন। আলিপুর আদালতের বিচারক থানায় রেফার করেন মামলা। তাতে অভিযোগ সত্য বলে রিপোর্টও আসে বলে দাবি বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের দাবি, নুসরতকে সশরীরে হাজিরা দিতে বলা হয়। কিন্তু হাজিরা দেননি নুসরত। বরং হাজিরা এড়াতে উচ্চ আদালতে যান তিনি। তাই বিনিয়োগকারীরা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টেটের দ্বারস্থ হয়েছেন।


এই ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। শঙ্কুদেব পণ্ডা বিনিয়োগকারীদের ইডি-র কাছে নিয়ে যান। নুসরতকে কেন ডাকা হবে না, কেন তদন্ত হবে না, প্রশ্ন তোলেন শঙ্কুদেব। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, "বিরাট দুর্নীতি হয়েছে। ওঁরা আমার কাছে এসেছিলেন। বয়স্ক মানুষজন। আমি শঙ্কুকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। ওঁরা সবাই বৃদ্ধ বয়সি। ওই সাংসদ সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। বিনিয়োগকারীদের জমা করা টাকা থেকেই ১ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা দিয়ে তিনি একটি ফ্ল্যাটও কিনেছেন, সব নথি রয়েছে আমাদের কাছে।" এ নিয়ে এখনও কোনও মন্তব্য করেননি নুসরত। বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছেন তিনি। সেই মতোই প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে জানিয়েছেন।