কলকাতা: দলে তাঁর কথাই এখনও শেষ। অন্তর্দ্বন্দ্বে যখন জেরবার তৃণমূল (TMC), সেই সময় শনিবার জাতীয় কর্মসমিতির (TMC National Working Committee) ঘোষণা করে নিজের সেই অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। আর সেই কর্মসমিতি থেকে নাম বাদ গেল ডেরেক ও’ব্রায়েন, সৌগত রায় এবং দুলাল মুর্মুর। দলের পুরনো কর্মসমিতিতে এত দিন তাঁদের নাম জ্বলজ্বল করলেও, এ বারে তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন এই তিন জন। তাঁদের জায়গায় তিন নতুন সদস্যের আগমন ঘটেছে, যশবন্ত সিনহা, রাজেশ ত্রিপাঠী এবং বুলুচিক বরাইকের। তফসিলি উপজাতি প্রতিনিধি হিসেবে কর্মসমিতিতে জায়গা পেলেন বুলুচিক।


কর্মসমিতি থেকে নাম বাদ যাওয়া নিয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি ডেরেক, সৌগত এবং দুলাল। তবে সাম্প্রতিক কালে প্রকাশ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায় (Abhishek Banerjee) এবং তাঁর ‘এক ব্যক্তি, এক নেতা’ মন্তব্যের সমর্থনে এগিয়ে এসে দলীয় নেতৃত্বের রোষে পড়েছিলেন সৌগত। সবরকম মন্তব্য থেকে তাঁকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে। কর্মসমিতি থেকে তাঁর নাম কেন বাদ গেল, তার সপক্ষে যদিও কোনও যুক্তি দেননি তৃণমূল নেতৃত্বও। জাতীয় স্তরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্যতম হলেন ডেরেক। তার পরেও কেন কর্মসমিতিতে ঠাঁই হল না, উত্তর মেলেনি।


‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নিয়ে দলের অন্দরে টানাপোড়েনের মধ্যে শনিবার কালীঘাটে বৈঠক করে জাতীয় কর্মসমিতির নতুন তালিকা ঘোষণা করেন মমতা। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তাতে তৃণমূলের জাতীয়স্তরের শীর্ষস্তরীয় সব পদ আপাতত অবলুপ্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক থেকে সর্বভারতীয় সহ সভাপতি—এই ধরনের জাতীয় শীর্ষপদে আপাতত কেউ থাকছেন না। বরং বর্তমানে তৃণমূলের জাতীয়স্তরে একটাই পদ রইল। তা হল, চেয়ারপার্সন। আর সেই পদে রয়েছেন খোদ মমতা। কর্মসমিতিতে পরবর্তীকালে পদের বিন্যাস ঘটবে, তবে তার জন্য মমতাই প্রার্থী মনোনীত করবেন। আগামী দিনে তার ঘোষণা হবে।


আরও পড়ুন: Dilip on TMC Working Committee: সিনিয়রদের পাঠিয়ে দিয়ে ক্ষমতাদখলের পরিকল্পনা, তৃণমূলের কর্মসমিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিলীপের


এ দিন জাতীয় কর্মসমিতির সদস্যদের যে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে সদস্য হিসেবে মোট ২০ জনের নাম রাখা হয়েছে। এই তালিকায় দলনেত্রী মমতা নিজে রয়েছেন। রয়েছেন অমিত মিত্র, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee), ফিরহাদ হাকিম, বুলুচিক বরাইক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, সুখেন্দুশেখর রায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অসীমা পাত্র, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, যশবন্ত সিনহা, মলয় ঘটক, রাজেশ ত্রিপাঠী, অনুব্রত মণ্ডল, অরূপ বিশ্বাস এবং গৌতম দেব।


বিরোধী দল বিজেপি যদিও এই নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, প্রবীণ নেতৃত্বকে সরিয়ে আসলে নতুনদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। তাই জাতীয় কর্মসমিতিতে রাখার নামে ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতদেরই সরিয়ে দিয়েছেন মমতা।