আশাবুল হোসেন, অনির্বাণ বিশ্বাস ও সুদীপ চক্রবর্তী, কলকাতা : ঘড়ি ধরে ১২ মিনিট... লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। সূত্রের খবর, রাজ্য়সভার সাংসদদের ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করলেও, লোকসভার সাংসদের ভূমিকায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য় যদি বিধায়কদের বিরুদ্ধে শাস্তি হয়, সাংসদদের বিরুদ্ধে হবে না কেন ? এদিকে, '২৬-এর ভোটের আগে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করলেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।
তৃণমূলের হাইভোল্টেজ নাটকীয় সোমবার। একদিকে, তৃণমূল সাংসদদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করলেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা করা হল অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে। দলের 'মুখ্য় সচেতকে'র পদ থেকে ইস্তফার ঘোষণা করলেন কল্য়াণ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। একই দিনে উত্তরবঙ্গের ২ জেলার তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করলেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়।
সোমবার ঘড়ি ধরে ঠিক ১২ মিনিট ভার্চুয়ালি দলীয় সাংসদদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের রাজ্য়সভার সাংসদদের ভূমিকার প্রশংসা করেন তিনি। কিন্তু, লোকসভার সাংসদের ভূমিকায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে, বাদল অধিবেশনে একদিনও উপস্থিত থাকতে পারেননি সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। এদিনের বৈঠকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, আপনি যতদিন না সুস্থ হচ্ছেন, বিশ্রাম নিন। আপাতত তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা হিসাবে কাজ করবেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। সূত্রের খবর, সেই সময় সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, তিনি এখন সুস্থ। দলনেত্রী চাইলে, পরদিনই তিনি দিল্লি পৌঁছতে পারেন। কিন্তু, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, এখন বিশ্রাম নিন। সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, সংসদে কারা কোন বিষয়ে কখন বক্তৃতা করবেন, তা, তাঁর সঙ্গে কথা বলে ঠিক করবেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। দলের 'হুইপ' কী হবে, না হবে, সেই বিষয়টাও তাঁর সঙ্গে কথা বলে অভিষেকই তৃণমূল সাংসদদের জানিয়ে দেবেন। তৃণমূলের এদিনের বৈঠকে উঠে আসে NRC থেকে শুরু করে, ভিন রাজ্য়ে বাঙালিদের হেনস্থার প্রসঙ্গও। সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, সংসদে এই বিষয়গুলি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে যেভাবে সরব হওয়ার দরকার ছিল, সেটা হয়নি। পাশাপাশি, তিনি বলেন, পার্টির ৩-৪ জন নিজেদের মধ্য়ে একে অপরকে আক্রমণ করছেন। পার্টির শৃঙ্খলা মানছেন না। এটা দল বরদাস্ত করবে না। এরকম চলতে থাকলে দল ব্য়বস্থা নেবে। এনিয়ে ডিসিপ্লিনারি কমিটি হবে বলেও তিনি জানান। সূত্রের খবর, তৃণমূলনেত্রী বলেন, শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য় যদি বিধায়কদের বিরুদ্ধে শাস্তি হয়, সাংসদদের বিরুদ্ধে হবে না কেন?
পাশাপাশি, এদিন তিনি জানিয়েছেন, লোকসভার দলনেতার কাজে, অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে সহযোগিতা করবেন, কাকলি ঘোষ দস্তিদার।
এদিকে, ২৬-এর ভোটের আগে সংগঠনকে কেমনভাবে ঝাঁপাতে হবে, তা নিয়ে এদিন কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে ক্য়ামাক স্ট্রিটের অফিসে বৈঠক করেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। তৃণমূল সূত্রে খবর, বৈঠকে, স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হবে। নিজেদের মধ্য়ে কোনও দ্বন্দ্ব যেন না হয়। ব্লক ভিত্তিক প্রচারে আরও বেশি করে জোর দিতে হবে। নিজের এলাকায় যত বেশি সম্ভব সময় দিতে হবে। সর্বোপরি, কোচবিহার জেলার ক্ষেত্রে অবশ্য়ই লোকসভা ভোটের ফলাফল ধরে রাখার বার্তা দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। বর্তমানে অসম সরকারের NRC নোটিস ঘিরে তপ্ত কোচবিহারের রাজনীতি। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই প্রেক্ষিতে আরও বেশি তৎপর হতে নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। ভিন রাজ্য়ে বাঙালি শ্রমিকদের ওপর অত্য়াচার প্রসঙ্গে আরও বেশি সোচ্চার হওয়ার নির্দেশ দেন। এদিন আলিপুরদুয়ার জেলা নেতৃত্বের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি।