কলকাতা: স্কুলের মিড ডে মিলে (Mid Day Meal) ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। বাংলার বিরুদ্ধে সেই নিয়ে রিপোর্ট জমা পড়ল কেন্দ্রীয় সরকারের ঘরে। কিন্তু এই অভিযোগ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ বলে অভিযোগ করছে রাজ্য সরকার (West Bengal Government)। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় এই ধরনের রিপোর্ট তৈরিতে কেন্দ্র এবং রাজ্য, দুই পক্ষের প্রতিনিধিই যুক্ত থাকেন। কিন্তু বাংলার মিড ডে মিল নিয়ে একপেশে রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। রাজ্যের প্রতিনিধিকে যুক্তই করা হয়নি রিপোর্ট তৈরিতে।


অন্তত ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ


বুধবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রকের নিযুক্ত রিভিও প্যানেলের ওই রিপোর্টের বিষয়টি সামনে আসে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে মাত্র ছ'মাসের মধ্যে মিড ডে মিল নিয়ে অন্তত ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। বলা হয়েছে, গত বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এই বিপুল টাকার দুর্নীতি হয়েছে। হিসেব চাইলে ১৬ কোটি অতিরিক্ত মিড ডে মিল দেখানো হয়।শুধু তাই নয়, নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ৭০ শতাংশ কম মিড ডে মিল খাবার সরবরাহ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে।


ওই রিপোর্ট নিয়ে ইতিমধ্যেই বাংলার তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ করতে নেমে পড়েছে বিজেপি। সেই আবহে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে জোড়াফুল শিবির। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মতে, মিড ডে মিল নিয়ে দ্বিচারিতা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের যৌথ পর্যালোচনা প্রকল্পে (Joint Review Mission)-এ রাজ্য সরকারের একমাত্র প্রতিনিধি,  কুকড মিড ডে মিল-এর অধিকর্তার সই ছাড়াই রিপোর্টটি জমা পড়েছে। রিপোর্টটি রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিকে দেখানো পর্যন্ত হয়নি বলে দাবি ব্রাত্যর।



আরও পড়ুন: Mid Day Meal: ৬ মাসে ১০০ কোটির দুর্নীতি! বাংলায় মিড ডে মিল নিয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, রিপোর্ট শিক্ষা মন্ত্রকের


যৌথ প্রকল্পের আওতায় রিপোর্ট তৈরি হলেও, রাজ্যের প্রতিনিধিকে বাদ রাখলে পর্যালোচনা কমিটির যৌথতা থাকে কী করে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ব্রাত্য। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের বক্তব্য রিপোর্টে জায়গা পায়নি। এর প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগ কমিটির চেয়ারপার্সনকে চিঠি দিয়েছে, আজও যার জবাব আসেনি। তাই এই ‘লুকোচুরি’ খেলার মধ্যে ‘অন্য অভিসন্ধি’ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন ব্রাত্য।


কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে, যে বিষয়গুলিকে অবৈধ বলা হচ্ছে, তাতে রাজ্যের বক্তব্য কতটা প্রতিফলিত হয়েছে, তা দেখা প্রয়োজন বলে মত ব্রাত্যর। তিনি জানিয়েছেন, ২০২১-২০২২ অর্থবর্ষের যে অডিট সম্পূর্ণ করেছে CAG, তাতে এমন কিছুর উল্লেখ নেই। তবে রাজ্যকে যুক্ত করা হোক বা না হোক, রাজ্যের প্রতিনিধির সই থাকুক বা না থাকুক, এ নিয়ে বাংলার তরফে জবাব পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ব্রাত্য। তাঁর দাবি, বাংলার সরকার দেশের ১২ কোটি ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১.২ কোটির মুখে খাবার তুলে দেয়। CAG সেই রিপোর্ট তৈরি করেছে। তার অপেক্ষা করা উচিত বলেও জানান ব্রাত্য।


রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ শান্তনুর


ব্রাত্য যে ‘অভিসন্ধি’র উল্লেখ করেছেন, তাকে আরও সোজসাপটা করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে উল্লেখ করেছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্য়বস্থায় সব প্রকল্প কেন্দ্র এবং রাজ্যের সমন্বয়ে চলে। দুই পক্ষের যোগদান থাকে তাতে। জয়েন্ট রিভিউ মিশনে তাই রাজ্যেরও প্রতিনিধি থাকার কথা। কিন্তু রাজ্যকে কিছু না জানানোই হয়নি এ বিষয়ে। বাংলার প্রতি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, এই রিপোর্টই তার প্রমাণ বলে মত শান্তনুর।