কলকাতা: করোনা কালে মাঝে দু’বছরের বিরতি। শহরে ফিরছে তৃণমূলের মেগা ইভেন্ট, ২১ জুলাই (21 July), শহিদ স্মরণ দিবস 9TMC Shahid Diwas 2022)।  তিন দশক আগের এক ২১ জুলাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) ডাকা কর্মসূচি ঘিরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল শহর। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন যুব কংগ্রেস (Yuva Congress) কর্মীর। সেই ২১ জুলাই আজ তৃণমূলের (TMC) রাজনৈতিক পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। তিন দশক আগে ঠিক কী ঘটেছিল, জেনে নিন বিশদে।


ঠিক যা ঘটেছিল তিন দশক আগে!


বাংলার রাজনৈতিক জনজীবন তখনও পুরুষতান্ত্রিক। যুব কংগ্রেসের তদানীন্তন নেত্রী মমতা নিজের রাজনৈতিক পরিচিতি গড়ে তুলতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্যে তখন ক্ষমতায় জ্যোতি বসুর সরকার। সিপিএমের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিংয়ের মতো অভিযোগ নিয়মিত উঠে আসছে বিরোধীদের মুখে। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে মহাকরণ অভিযানের ডাক দেন মমতা।


দিনটি ছিল ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই। প্রথমে ঠিক ছিল, ১৪ জুলাই মহাকরণ অভিযান হবে। কিন্তু প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের মৃত্যুতে কর্মসূচি পিছিয়ে যায় ২১ জুলাইয়ে। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিমুখে জন সমাগম বাড়তে থাকে। পাঁচ দিক থেকে মহাকরণের উদ্দেশে এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের তৎকালীন কর্মী-সমর্থকরা। মমতা নিজে সকলকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। পাঁচ দিক থেকে এগোতো থাকা মিছিলের অগ্রভাগে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পঙ্কজ বন্দ্যোপাধ্যায়, মদন মিত্রেরা।


আরও পড়ুন: TMC Shahid Diwas 2022: বিগত বছরের মতো, এবারও ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ ত্রিস্তরীয়


মিছিল আটকাতে পাঁচ দিক থেকে ব্যারিকেড তুলে দেয় পুলিশ। তাতে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকেরা। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষ বেধে যায় তাঁদের। পুলিশকে লক্ষ্য করে একদিকে যেমন উড়ে আসতে থাকে ইট-পাথর। তেমনই কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে বিক্ষোভকারীদের হটানোর চেষ্টা করে পুলিশও। তাতে ব্রেবোর্ন রোডের কাছে অসুস্থ হযে পড়েন মমতা। সেই ধুন্ধুমারের মধ্যেই মেয়ো রোডের কাছে পরিস্থিতি অত্যন্ত তেতে ওঠে। বোমা পড়ার খবর মেলে। তার আঁচ ছড়িয়ে পড়ে মধ্য কলকাতার সর্বত্র।


রেড রোডে পুলিশের ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের তাড়া খেয়ে পুলিশের পদস্থ অফিসারেরা  কার্যত পালাতে শুরু করেন। সেই অবস্থায় পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। তাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে


মারা যান যুব কংগ্রেসের ১৩ জন সদস্য-সমর্থক। কার নির্দেশে সেদিন পুলিশ গুলি চালিয়েছিল, আজও তার মীমাংসা হয়নি। তবে রাজ্যের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বক্তব্য ছিল, ‘‘মহাকরণ দখল করতে আসছিল ওরা। পুলিশ গুলি চালিয়েছে।’’  


বছর বছর শহিদ স্মরণ দিবস পালন করে আসছে তৃণমূল


কলকাতার বুকে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনাই রাজ্য রাজনীতিতে নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে মমতাকে। তার পাঁচ বছর কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে গঠন করেন নিজের দল তৃণমূল। এর পর ২০১১ সালে বাম সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল। আজও বছর বছর২১ জুলাই দিনটি শহিদ স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে তৃণমূল।