কলকাতা: মঞ্চ প্রস্তুত করে রেখেছিলেন এক বছর আগেই। আরও একবার বিজেপি-র বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী দিনে দিল্লি দখলের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি বিরোধী জোট নিয়ে নিজের অবস্থান সম্পর্কও ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন (Mamata Banerjee)। মমতার কথায়, আগামী দিনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না বিজেপি। আর তেমন হলেই বাকি সব বিরোধী পক্ষ একজোট হয়ে যাবে। বিজেপি-র (BJP) কারাগার ভেঙে ২০২৪-এ মানুষের সরকার আনার কথা শোনা গেল তাঁর মুখে (Lok Sabha Election 2024)। রাষ্ট্রপতি এবং উপ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলের অবস্থান নিয়ে যখন প্রশ্ন উঠছে, সেই সময় মমতার মন্তব্য় গুরুত্বপূ্রণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
শহিদ স্মরণ সমাবেশে ২০২৪ নিয়ে বার্তা মমতার
বৃহস্পতিবার কলকাতার বুকে তৃণমূলের শহিদ স্মরণ সমাবেশে (TMC Shahid Diwas 2022) মমতার বক্তৃতার বড় অংশ জুড়ে ছিল বিজেপি। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের তীব্র নিন্দা করেন তিনি। বলেন, ‘‘বিজেপির সরকার এখনও কী সব বিল নিয়ে আসছে! কোনও মাথামুণ্ড নেই। সবার চাকরি খেয়ে নিচ্ছে। রেলে ৮০ হাজার চাকরি তুলে দিয়েছে। টি বোর্ড উঠিয়ে দিল। জুট ইন্ডাস্ট্রি শেষ করে দিল। এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রি করে দিল। এখন বলছে ২০ হাজার না ৪০ হাজার অগ্নিবীর নিয়োগ করবে। ৮০ হাজার চাকরি তো আগেই খেয়ে নিয়েছে!’’
বিজেপি কোনও ঐতিহ্য মানে না বলে মন্তব্য করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘কোনও প্রতিষ্ঠানের ঐতিহ্য মানে না। দেশের সংসদভবন পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে। নতুন করে ইতিহাসের বই লেখা হচ্ছে। যারা জীবনে স্বাধীনতার যুদ্ধ করল না, তারা নাকি ইতিহাস তৈরি করবে! এখন থেকেই ধমকাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় চাইলে বিজেপি থেকে অনেক ভোট নিতে পারতাম নাম। অথচ আসানসোলের নরেশকে ফোন করে ধমকায় গদ্দাররা। বলে ভোট না দিলে ইডি পাঠাবে। এ ভাবে চলতে পারে!’’
হুঁশিয়ারির সুরে মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘বাংলার মানুষ মাথা নীচু করতে জানে না। বাংলায় টাকা দিচ্ছে না। সাতমাস ধরে টাকা দিচ্ছে না। আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করেছে। রাজনীতিতে কেউ হারে, কেউ জেতে। হেরেছো বলে টাকা দেবে না? সবাই বিজেপিকে ভয় পায়, আমরা ভয় পাই না। দিল্লি গিয়ে অবরোধ করব। একশো দিনের টাকা দাও। এটা আমাদের অধিকার। গরিবের অধিকার। তাদের টাকা কেন বন্ধ করেছে? বলছে বাংলার নাম কেন থাকবে? কেন থাকবে না? গুজরাতের নাম থাকলে, রাজস্থানের নাম থাকলে বাংলা কী দোষ করেছে? বাংলায় বন্ধ করা এত সহজ নয়। আমরা ঝুঁকি না।’’
বিজেপি-কে আক্রমণ করে মমতা আরও বলেন, ‘‘কখনও হিন্দু কার্ড খেলছে, কখনও মুসলিম কার্ড খেলছ, কখনও বৌদ্ধ নিয়ে খেলছে, কখনও জৈন নিয়ে খেলছে।’’ সাধারণ মানুষের উদ্দেশে এর পর প্রশ্ন ছুড়ে দেন মমতা, ‘‘আগামী দিন দিল্লি দখল করবেন তো? বিজেপিকে হারাতে তৈরি? বিজেপিকে হারাবেন? জীবন দিয়ে লড়াই করবেন? ’’ মমতার কথায়, ‘‘আগামী দিনে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাবে না বিজেপি। চ্যালেঞ্জ করে বলছি। আর তা হলেই বাকিরা এক হয়ে যাবে।’’
দিল্লিতে লড়াই টেনে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত মমতার
বাংলার বাইরে এখনও পর্যন্ত সাফল্য পায়নি তৃণমূল। কিন্তু মমতার কথায়, ‘‘আমি চাই, ভারতে একটাই আদর্শ পার্টি থাকুক, একটাই সাহসী দল থাকুক, একটাই দল থাকুক, তার নাম তৃণমূল।চব্বিশে বিজেপির কারাগার ভাঙো। মানুষের সরকার আনো। চব্বিশ ইলেকশনের ভোট নয় রিজেকশনের ভোট। প্রত্যেকটা সিট জিততে হবে। ত্রিপুরায় জিততে হবে, মেঘালয়ে জিততে হবে, গোয়ায় জিততে হবে, উত্তরপ্রদেশে জিততে হবে। আমরা বন্ধুদের সমর্থন করব, আমরাও লড়ব।’’