শিবাশিস মৌলিক, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও আশাবুল হোসেন : প্রায় তিন দশক আগে যুব কংগ্রেসের কর্মসূচির দিন রক্তাক্ত হয়েছিল ধর্মতলা (Dharmatala)। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। এতদিন পর, সেই ঘটনা নিয়ে বিগত বাম সরকারের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করেছেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র (Madan Mitra)। যা নিয়ে আবার পাল্টা সুর চড়িয়েছে বামেরা।


একুশের ভোটে জয়ের পর, ধর্মতলায় প্রথম একুশের সমাবেশ। ২৪ ঘণ্টা আগে বুধবারই সমাবেশস্থলে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চের নীচে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বসে চা খেতে খেতে, প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা সেরে নেন। তিন দশক আগে, এই ২১ জুলাই, তাঁর ডাকা কর্মসূচি ঘিরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল এই ধর্মতলা। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীর। 


কী ঘটেছিল সেদিন ?


তখনও তৃণমূলের জন্ম হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী। রাজ্যের ক্ষমতায় জ্যোতি বসুর সরকার। সিপিএমের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিংয়ের মতো অভিযোগ নিয়মিত শোনা যেত বিরোধীদের মুখে। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য, সচিত্র পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে এই কর্মসূচির দিন ঠিক হয়েছিল ১৪ জুলাই। কিন্তু, ওই সময় প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের প্রয়াণের কারণে, কর্মসূচির দিন পিছিয়ে ২১ জুলাই করা হয়। ওই দিন সকাল ১০টা থেকে মহাকরণ অভিমুখী জমায়েত শুরু হয়। মহাকরণ ঘিরে পাঁচটি এলাকা দিয়ে এগোতে থাকেন যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। তাঁদের সঙ্গে রাস্তায় নামেন মমতা নিজেও। বিভিন্ন মিছিলে ছিলেন সৌগত রায়, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, মদন মিত্ররা।


আরও পড়ুন ; আজ তৃণমূলের ২১ জুলাই, সকাল থেকেই শহরের একাধিক স্থানে কর্মী-সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড়


মহাকরণে পৌঁছনোর আগে পাঁচ দিক থেকে ব্যারিকেড করে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। তাতেই ধুন্ধুমার শুরু হয়। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সঙ্ঘর্ষ বেধে যায় যুব কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের। পুলিশকে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট-পাথরবৃষ্টি। বিক্ষোভকারীদের হটাতে পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। সবমিলিয়ে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় মেয়ো রোড-রেড রোডের মোড়ে। বোমাও পড়ে। সেই উত্তেজনার আঁচ ছড়িয়ে পড়ে গোটা মধ্য কলকাতায়। রেড রোডে পুলিশের ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বিক্ষোভকারীদের তাড়া খেয়ে পুলিশের পদস্থ অফিসারেরা পালাতে থাকেন। সেই অবস্থায় গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশবাহিনী। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান ১৩ জন।


কার নির্দেশে পুলিশ সেদিন গুলি চালিয়েছিল, সেই প্রশ্নের মীমাংসা আজও হয়নি। তিন দশক পর একুশে জুলাইয়ের ঠিক মুখে, তা নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। তিনি বলেন, আমরা এসেছি ১১ বছর। মহাকরণ ছাড়ার আগে বামেরা নথি লোপাট করে গেছে। এখনও কিছু আছে। তার নিরিখে বিচার হবে।


যদিও এনিয়ে পাল্টা সুর চড়িয়ে জবাব দিয়েছে বামেরা।