কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, বিজেন্দ্র সিংহ ও উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা: মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় পাশে ছিলেন না তৃণমূলের কেউ। রণকৌশল নিয়ে আলোচনাতেও কেউ যোগ দেননি। তাই আসন্ন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে (Vice President Election) তৃণমূলের (TMC) অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। নিজেদের বিজেপি (BJP) বিরোধী শিবিরের অংশ বলে দাবি করলেও, ১৭টি বিরোধী দলের প্রার্থী মার্গারেট আলভার (Margaret Alva) বদলে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ শিবিরের প্রার্থী জগদীপ ধনকড়ের (Jagdeep Dhankhar) সমর্থনেই তাদের ভোট পড়বে বলে জল্পনা তুঙ্গে। সেই জল্পনা আরও উস্কে দিলেন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। বিরোধী প্রার্থীকে সমর্থন নিয়ে দল কেন পরিষ্কার ভাবে নিজের অবস্থান জানাচ্ছে না প্রশ্ন করা হয় তাঁকে। জবাবে কুণাল বলেন, "এ নিয়ে ভাবার মতো উপকরণ আছে, তাই দল ভাবছে।"


উপরাষ্ট্রপতি তৃণমূলের অবস্থান ঘিরে প্রশ্ন


সতেরোটি বিরোধী দলের উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী মার্গারেট আলভা কি তৃণমূলের সমর্থন পাবেন, জাতীয় রাজনীতিতেও এই মুহূর্তে ঘুরছে এই প্রশ্ন। সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে কুণাল বলেন, "মার্গারেট আলভা শরদ পাওয়ারের প্রার্থী। আর জগদীপ ধনকড়, তিনি তো আদি বিজেপি নন। তিনি নানা দল ঘুরে চাকরি করেছেন।" আরও এক কদম এগিয়ে কুণাল বলেন, "ধনকড় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফ্যান। আমাদের বলেছিলেন, 'ভিপি সিংহের সরকারের সময় সিপিএম বারণ করেছিল। তাতেও শুনিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন জখম হলেন তখন দেখতে গিয়েছিলাম।' আবার বলেছিলেন, 'ব্যক্তিগত পরিসরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) খুব আন্তরিক। কিন্তু প্রশাসনিক কাজে আমার কথা শোনেন না'।" কুণালের মন্তব্যেই কি তাহলে তৃণমূলের অবস্থান প্রতিফলিত হচ্ছে, আচমকাই কি জগদীপ ধনকড়ের প্রতি সুর নরম করল তৃণমূল, ভাবাচ্ছে রাজনৈতিক মহলকে।


বিরোধীদের তরফে উপরাষ্ট্রপতি পদে মার্গারেটকে বেছে নেওয়া থেকে তাঁর মনোনয়ন জমা এবং সর্বোপরি কৌশল বৈঠক, আগাগোড়া তৃণমূলের অনুপস্থিতি নজর কেড়েছে। তাতেই দার্জিলিংয়ে ধনকড়ের সঙ্গে মমতার আচমকা সাক্ষাৎ, দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে সুরবদল, দুই দুইয়ে চার করে নিচ্ছেন বিরোধী শিবিরের অনেকেও।  এ নিয়ে প্রশ্ন করলে কুণাল বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিজ্ঞ নেত্রী। তিনি দেখছেন। সকলের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবেন। মার্গারেট আলভা কংগ্রেসের প্রার্থী । কিন্তু তিনি আত্মজীবনীতে পি ভি নরসীমা রাও আমলের দুর্নীতি, সিবিআই এর অপব্যবহার, এমনকি সনিয়া গাঁধীর পর্যন্ত সমালোচনা পর্যন্ত করেছেন। কংগ্রেসের মধ্যেই তাকে নিয়ে আন্ডার কারেন্ট আছে।"


আরও পড়ুন: Vice President Election: মমতার প্রস্তাব খারিজ করেন সনিয়া, চটে যান প্রণব! আত্মজীবনীতে তৃণমূল নেত্রীর উল্লেখ মার্গারেটের


স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধী নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরর্জন চৌধুরী বলেন, "আলভার মনোনয়ন জমা দিতে খোদ রাহুল গাঁধী এসেছিলেন...তৃণমূলের অবস্থান খুব স্পষ্ট। ওঁরা কোনভাবেই মোদিকে রাগাতে চান না। কারণ ওঁরা জানেন, মোদি অসন্তুষ্ট হলে এঁদের অনেককেই জেলে যেতে হবে। যশবন্ত সিনহা তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন। কংগ্রেস কিন্তু এক বাক্যে তাঁকে মেনে নিয়েছে। অন্য কোনও নাম নিয়ে আপত্তি করেনি। আসলে আসলে বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানোই মমতার একমাত্র কাজ।"


ধনকড়, নাকি মার্গারেট, কাকে সমর্থন তৃণমূলের!


কটাক্ষের সুর ধরা পড়েছে রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি তথা বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি দিলীপ ঘোষের গলাতেও। তিনি বলেন, "মমতা কনফিউজড। এখন বুঝেছেন, কোনও উপায় নেই। ন্যাড়া বেলতলায় দ্বিতীয়বার যায় না।"


তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় জানিয়েছেন, ২১ জুলাই কালীঘাটের বাড়িতে দলের সাংসদদের নিয়ে বৈঠক করবেন মমতা। সেখানেই কাকে সমর্থন জানানো হবে, কাকে হবে না, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। ভিড় বাড়াতে চাননি বলেই বিরোধী প্রার্থীর মনোনয়নে যাননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাহলে শেষমেশ উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৃণমূল কী অবস্থান নেবে? তারা কি ভোটে অংশ না নেওয়ার কৌশল নিতে পারে? উঠছে প্রশ্ন।