হাওড়া: বর্ধমানে প্রশাসনিক সভার উদ্দেশে রওনা দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তার আগে আবারও বিজেপি বিরোধী জোট I.N.D.I.A, বিশেষ করে কংগ্রেসের সঙ্গে মতভেদের কথা  তুলে ধরলেন তিনি। বিশেষ করে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। জানালেন, বাংলার ব্যাপারে কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই তাঁদের। জাতীয় স্তরে কী হবে, তা লোকসভা নির্বাচনের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। (I.N.D.I.A Alliance)


'ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা' নিয়ে কিছুদিনের মধ্যেই বাংলায় ঢুকছেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী। সে ব্যাপারে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি বলে দাবি মমতার। বুধবার বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় যোগ দিতে রওনা দেন মমতা। হাওড়ার ডুমুরজলা থেকে হেলিকপ্টারে চেপে রওনা দেন। তার আগে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। তিনি বলেন, "আমার সঙ্গে কারও, কোনও কথা হয়নি। আমরা গোড়াতেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ওরা প্রথম থেকেই প্রত্যাখ্যান করেছে। তখনই দল সিদ্ধান্ত নেয়, বাংলায় একা লড়ব আমরা।"


তাহলে কি I.N.D.I.A জোটে থাকবেন মমতা? উত্তরে বলেন, "আমি জোটের সঙ্গী। সৌজন্য দেখিয়েছে কি? আমাকে কি জানিয়েছেন যে, 'আপনার রাজ্যে আসছি'? জানায়নি। বাংলার ব্যাপারে আমার সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। জাতীয় স্তরে কী হবে, ভোটের পর ভাবব। আর জোট কারও একার নয়। আমরা আঞ্চলিক দলগুলি একজোট। ওরা একা ৩০০ আসনে লড়াই করুক। বাকি আসনে আঞ্চলিক দলগুলি লড়বে, সেখানে কেউ নাক গলাতে পারবেন না। সেখানে হস্তক্ষেপ করলে আমপরা বুঝে নেব। আমরা ধর্মনিরপেক্ষ দল। কিন্তু এখন কোনও কথা নেই। আমি মিথ্যে বলতে পারব না। কোনও কথা হয়নি। কেউ কেউ রাজনীতি করছেন।"


আরও পড়ুন: Mira Road Tension: কোনও উস্কানি যেন না ছড়ায় ! সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গ্রুপ অ্যাডমিনদের উদ্দেশে কড়া নির্দেশ পুলিশের


এ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, "ওঁর এটা বলা কাম্যই ছিল। এসব না বললে দিল্লির দাদারা খুশি হবেন না। আমরা গত কয়েক বছর ধরেই বলে আসছি, বাংলায় বিজেপি-র হাত শক্ত করেছেন ওঁরা। অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়েও তাই করেছেন। একথা বাল ছাড়া কোনও উপায় নেই ওঁর। প্রতি নিয়ত বিজেপি-র হাত শক্ত করছেন, সংসদেও বিজেপি-কে বিল পাস করাতে সাহায্য করেছেন। তৃণমূলের পক্ষে বিজেপি-র বিরোধিতা করা সম্ভব নয়।"


সিপিএম নেতা তন্ময় ভট্টাচার্য হলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আরও ভাল করে চিনুক কংগ্রেস। আমরা অনেক আগে বুঝে গিয়েছি। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি। বিজেপি-র হাত ধরতে আবারও এগোচ্ছে তৃণমূল। সিবিআই-ইডি তদন্ত যাতে মাথা পর্যন্ত না পৌঁছয়, তার জন্য এসব করছেন। গতকালও রাহুল ভাল সম্পর্কের কথা বলেছেন। আসলে মমতা যে বিজেপি-র সঙ্গই থাকতে চান, এটা বলা ছাড়া ওঁর রাস্তা ছিল না। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, মমতা জোটে থাকবেন না। সেই কথাই সত্য হল।"


তবে বাংলায় বাগযুদ্ধ চরমে উঠলেও, একদিন আগেই মমতার সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা জানিয়েছিলেন রাহুল। তাঁর বক্তব্য ছিল, "আসন নিয়ে সমঝোতা চলছে। মমতাদির সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে আমার ভাল সম্পর্ক। দলের সম্পর্কও ভাল। মাঝে মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ে সমস্যা হয় বইকি! ওঁদের কেউ কিছু বলে দেন, আমাদের তরফ থেকেও কেউ কেউ কিছু বলেন। তবে এটা স্বাভাবিকই। এতে তেমন বড় সমস্যা হবে না।"


লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বিরোধী জোটের পক্ষে প্রথম সওয়াল করেছিলেন মমতাই। এমনকি বিরোধী জোটের I.N.D.I.A নামকরণও তাঁরই করা বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু বাংলায় আসন সমঝোতা নিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্যা দেখা দিয়েছে। মমতার জাবি, আঞ্চলিক দলগুলি যে যেখানে শক্তিশালী, তাদের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের ৩০০টি আসনে তাঁরা ভাগও বসাতে যাবেন না। কিন্তু তা না করে কংগ্রেস কখনও ১০, কখনও আবার রাজ্যে ১২টি আসন চাইছে। এ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই বিরোধী শিবিরে মতভেদ চলছে। সেই আবহেই কংগ্রেসকে এদিন কড়া বার্তা দিলেন মমতা।